ঢাকা: নতুন করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তরফ থেকে কিছু জায়গার কথা উল্লেখ করে সভা-সমাবেশ না করার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। আর ডিএমপি কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা জারি করা জায়গাগুলোতেই গণজমায়েতের দেখা মিলছে।
অবশ্য এই নির্দেশনার আগে থেকেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা তিন দফা দাবিতে কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং ও প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে গত তিনদিন ধরে অবস্থান করছেন।
এই বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে মানুষ নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় জড়ো হচ্ছেন। নিরাপত্তা ও জনভোগান্তি রোধে পুলিশের পক্ষ থেকে শুধু নির্দেশনাই আছে, নির্দেশনা বাইরেও কিছু করতে হলে ওপর মহলের নির্দেশ লাগে। তাছাড়া গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে যেখানে পুলিশ গণজমায়েত সমাজ সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, সেখানেই লোকজন দাবি নিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা বসে নেই। যেখানেই লোকজন সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নিচ্ছে পুলিশ তাৎক্ষণিক উপস্থিত হয়ে তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। এ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। কিন্তু বল প্রয়োগের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে আসতে হয়। তবে বল প্রয়োগের পরে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে কিনা এই বিষয়গুলো ভাবিয়ে তুলছে।
শুক্রবার (১৬ মে) বিকালে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে মাঠে পুলিশ সক্রিয় আছে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বিকেলে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগ থেকে পাঠানো গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাজধানীতে প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবন, বিচারপতি ভবন, জাজেস কমপ্লেক্স, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান গেট, মাজার গেট, জামে মসজিদ গেট, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১ ও ২ এর প্রবেশ গেট, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবনের সম্মুখেসহ বিভিন্ন স্থানে সকল প্রকার সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
এছাড়া বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায় ও প্রতিবাদ কর্মসূচির নামে যখন-তখন সড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে বিঘ্ন না ঘটানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানানো হয়েছে গণবিজ্ঞপ্তিতে।
এদিকে কয়েকটি দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং মোড়ে গণঅনশনে বসেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দাবি না মানা পর্যন্ত পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই - এমনটি বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দিন। শুক্রবার (১৬ মে) বেলা সাড়ে ১১টার পর আন্দোলনে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
সড়ক অবরোধ করে রাখার কারণে কাকরাইল এলাকায় ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। গত তিনদিন ধরেই যানজটের এই ভোগান্তি চলমান। গত ১৪ মে থেকে এখানে কর্মসূচি পালন করছেন জবির শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।
জবি শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো - জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসনবৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে নতুন নির্দেশনার আগে গত ১০ মে বাংলাদেশ সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় মিছিল, সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এর আগে গত ৮ মে রাত থেকে গণহত্যাকারী হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত ও দলটিকে নিষিদ্ধের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি করে ছাত্র-জনতা।
এজেডএস/এসএএইচ