ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ফিরে দেখা ২০১৫

কক্সবাজারের উন্নয়নে ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

তুষার তুহিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
কক্সবাজারের উন্নয়নে ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কক্সবাজার: ২০১৫ সাল হারিয়ে যাবে শতাব্দীর অতলে।   কিন্তু সুখস্মৃতিতে ভরা এ বছরটি মুছে যাবেনা কক্সবাজারবাসীর মানসপট থেকে।

কেননা সমুদ্রনগরী কক্সবাজারকে ঘিরে এ বছরই হাতে নেওয়া হয় ৪০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প।

তাই কক্সবাজারবাসীর কাছে এ বছরটি বিবেচিত হচ্ছে জেলার উন্নয়নের বছর হিসেবে।   কক্সবাজারের উন্নয়নে হাতে নেওয়া সবকয়টি প্রকল্পের কাজের তদারকি করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে। এরমধ্যে অনেক প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে।

এসব প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজারের চেহারা পাল্টে যাবে। তাই এবছর স্বমহিমায় চিরস্মরণীয় থাকবে জেলাবাসীর হৃদয়পটে।

সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের শুরু থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারকে সাজাতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। অর্থনৈতিক, ক্রীড়া, পর্যটন ও কক্সবাজারবাসীর জীবনমানের উন্নয়নের পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সাজানো হয় এসব পদক্ষেপ।

এর মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে রামুতে নির্মিত হয়েছে সেনানিবাস, অর্থনৈতিকভাবে কক্সবাজারকে এগিয়ে নিতে নেওয়া হয়েছে ২৬টি মেগা প্রকল্প, পর্যটন খাতের উন্নয়নে গ্রহণ করা হয়েছে হাজার কোটির টাকার প্রকল্প, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। পাশাপাশি বাস্তুহারাদের জীবনমান উন্নয়নে নির্মিত হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ আশ্রয়ন প্রকল্প।

১ মার্চ রামু উপজেলার খুনিয়াপালং, দক্ষিণ মিঠাছড়ি ও রাজারকুল ইউনিয়নের ১৭৮০ একর জমির ওপর সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের উদ্ধোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২ জুলাই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কাজ উদ্বোধন করেন। আর এজন্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা।

বছরের শুরুতেই ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মহেশখালীর মাতারবাড়ি ও ধলঘাটায় ১৪১৪.৬৫ একর জমির ওপর কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।   জাইকার আর্থিক সহযোগিতায় ১২০০ মেগাওয়াট সম্পন্ন বিদ্যুৎ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার ৭৭ জনকে তাদের প্রাপ্য পরিশোধ করা হয়েছে। একইসময়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড মহেশখালীর অমাবশ্যাখালী, পানিরছড়া, হরিয়ারছড়া, কালারমারছড়া, হেতালিয়া, ও হোয়ানকের ৫৬৪৬.৯৫ একর জমির

ওপর এলএনজি ও কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
চলতি বছরেই একই উপজেলার মাতারবাড়িতে ১২০০ একর জমির ওপর ৭০০ মেগাওয়াট ও আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। যার জমি গ্রহণের জন্য এরমধ্যেই ৬ ধারায় নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।

পেকুয়া উপজেলার করিয়ারদিয়ায় ১২০০ ওমেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১৫৬০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে একটি বেসরাকারি প্রতিষ্ঠান। যার প্রস্তবনা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। এছাড়া মহেশখালী ও পেকুয়া উপজেলার ১৩টি মৌজা থেকে মহেশখালী-আনোয়ার গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন প্রকল্পের জন্য ৮৩.৪৫১০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে।

এ বছরই উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ২৪৬ কোটি ৭৭ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা।   নির্মাণ কাজের জমি অধিগ্রহণের জন্য ইতিমধ্যেই ৭ ধারায় নোটিশ প্রদান করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া মেরিন ড্রাইভ সড়কের তৃতীয় পর্যায়ের নির্মাণ কাজের জন্য টেকনাফে ২১৫.০৬১ একর জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।  

কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজায় ৪ একর জমিতে নতুন বিদ্যুৎ বোর্ড গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কুতুবদিয়া উপজেলায় ০.৩৩ একর জমিতে নির্মিত হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। একই উপজেলায় বড়ঘোপ ও মহেশখালীর ঠাকুরতলায় নির্মিত হচ্ছে কোস্টগার্ড স্টেশন। সদর উপজেলার তেতৈয়া, চৌফলদন্ডী ও চকরিয়া বাটাখালীতে নির্মিত হচ্ছে এপ্রোচ রোড।

মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা, কালারমারছড়া ও কালিগঞ্জে নির্মিত হচ্ছে  ইন্সটলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং। পেকুয়ার ৪১৯ একর জমিতে নৌবাহিনীর সাব-মেরিন ঘাটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। একইসঙ্গে ০.২৩ একর জমিতে সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন সম্প্রাসরণের কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

২০১৫ সালেই অর্থনৈতিকভাবে কক্সবাজারকে সমৃদ্ধ করতে ৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ৩টি বিশেষ অঞ্চল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। এরমধ্যে টেকনাফের সাবরাংয়ে ৮৮২.৮৬ একর জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে ইকোনমিক জোন। একই উপজেলার জালিয়ার দ্বীপের ২৭১ বেইজা নির্মাণ করছে আরেকটি পর্যটন সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল। এছাড়া সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী-পোকখালীতে ৯৭০.১৩ একর জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়।

এ বছরই মহেশখালীর ধলঘাটা, উত্তর নলবিলা, হামিদ্বরদিয়াও কুতুবজুম, ছোট মহেশখালী, পাহাড় ঠাকুরতলা, গোরকঘাটা, সোনাদিয়া, ঘটিভাঙ্গার প্রায় ১৩ হাজার ৮৭৫ একর জমিতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। ইতিমধ্যেই এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু হয়েছে।
এছাড়া খেলাধুলায় কক্সবাজারের সুনাম বাড়াতে রামুতে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। যার জায়গা ইতিমধ্যেই পরিদর্শন করেছেন সরকারের
উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে রেললাইন লাইন নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে ১ হাজার একর জমি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রস্তাবিত এলাকা পরির্দশন করেছেন।

৬ জুলাই পরিকল্পিত উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন অনুমোদন করেন মন্ত্রিসভা। এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর বিশ্ব দরবারে কক্সবাজারকে তুলে ধরতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মেগাবিচ কার্নিভাল।  

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলি হোসেন বাংলানিউজকে জানান, সরকার কক্সবাজারের চেহারা পাল্টে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য গ্রহণ করেছে ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। এসব প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুত।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
টিটি/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।