ঢাকা: পুরো অফিস, অর্ধেক বাস, দ্বিগুণ ভাড়া এসব মিলে রাজধানীবাসীর ভোগান্তি এখন চরমে। বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) ছিল গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী বহন ও ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর দ্বিতীয় দিন।
এদিন সকাল থেকেই গণপরিবহন সংকটে পড়তে শুরু করেন যাত্রীরা। রাজধানীর একাধিক স্থানে সড়ক অবরোধ করেছে বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা।
এর পাশাপাশি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ বন্ধ থাকায় জনসাধারণের ভোগান্তি বেড়ে যায় দ্বিগুণ। রাইড শেয়ারে মোটরসাইকেলের রাইডাররাও সড়কে বিক্ষোভ করেছেন।
গত বুধবার (৩১ মার্চ) সকাল থেকে সারাদেশে ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়ায় অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহন শুরু হয়। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে দুই সপ্তাহ এ আদেশ বলবৎ থাকবে।
বুধবারের পর বৃহস্পতিবার যাত্রীদের ভোগান্তিও ছিল চোখে পড়ার মতো। বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর খিলক্ষেতে রাস্তা অবরোধ করেন। এ সময় পুরো বিমানবন্দর সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ জটলা তৈরি হয়। কুড়িল ফ্লাইওভার-বনানী আর অপরদিকে প্রায় উত্তরা পর্যন্ত সড়ক স্থবির হয়ে পড়ে।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করেন বিভিন্ন অ্যাপসের বাইক রাইডাররা।
বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে প্রধান সড়ক বন্ধ করে অবস্থান নেন অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল চালক। মোটরসাইকেল আড়াআড়ি করে রেখে ২৭ নম্বর প্রধান সড়ক বন্ধ করে দেন চালকরা। এতে পুরো সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মেরুল বাড্ডা ইউলুপের নিচে দু’পাশে অবস্থান করে বিক্ষোভ করেন রাইড শেয়ারিং অ্যাপসের মোটরসাইকেল চালকরা। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে তাদের সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম সড়ক শাহবাগ মোড়েও মোটরসাইকেল চালকরা অবস্থান নেন। দুপুর পৌনে ১টার দিকে তারা সড়কে অবস্থান নিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এসব বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারি নির্দেশনা সবেমাত্র জারি হয়েছে। কার্যকর করার জন্য কিছু সময়ের প্রয়োজন। আমরা মালিকদের বলে দিয়েছি তারা যেন ভাড়া নিয়ে বেশি ঝামেলা না করে। আর আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রতিনিয়ত কাজ করছে।
পরিবহন মালিকদের মতে, আগে একটি ৫২ সিটের বাসে কমবেশি ৭০ জন যাত্রী পরিবহন করা হতো। এখন সেখানে নেওয়া হচ্ছে মাত্র ২৬ জন। ফলে পরিবহন সংকট দেখা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও যদি অর্ধেক জনবল নিয়ে অফিস পরিচালনা করে তাহলে হয়তো কিছুটা সংকট দূর হবে। কিন্তু এটা করা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করবো। কোনোমতেই অর্ধেকের বেশি যাত্রী নেওয়া হবে না।
এদিকে গণপরিবহনে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ, ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী দুর্ভোগ বন্ধের দাবি জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, করোনা সংকটে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চালানোর জন্য বাসের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানো হলেও দেশের অধিকাংশ গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। সিটি সার্ভিস ও শহরতলীর বাস, হিউম্যান হলার, অটোটেম্পুতে বর্ধিত ভাড়া নিয়ে সেই পুরনো কায়দায় গাদাগাদি করে যাত্রী বহন করা হচ্ছে। এতে কর্মজীবী, শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের সাধারণ লোকজন, কর্মহীন ও আয় কমে যাওয়া দেশের সাধারণ মানুষের যাতায়াত দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, সব অফিস আদালত খোলা থাকায় অর্ধেক যাত্রী নিয়ে সিটি সার্ভিসের বাসগুলো চলাচলের ফলে রাস্তায় প্রতিটি বাসস্টপেজে শতশত যাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় অপেক্ষা করে গণপরিবহন পাচ্ছে না। এতে নারী, শিশু, অসুস্থ রোগী ও অফিসগামী যাত্রীরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২১
ডিএন/আরবি