বাগেরহাট: তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে বাকবিতণ্ডার জের ধরে বাগেরহাটের রামপালে মিকাইল হোসেন নামে এক কৃষকের বাড়ির প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অনুরোধে অসহায় কৃষক পরিবারটি তাদের চলাচলের পথ ফিরে পাননি।
অসহায় কৃষক মিকাইল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, রাজনগর মৌজায় ৭৫ শতাংশ জমি কিনে ৩০ বছর ধরে বসবাস করছি। বছর তিনেক আগে আমার প্রতিবেশী বালুর ব্যবসায়ী তহিদুল হাজরার সঙ্গে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে আমাদের বাকবিতণ্ডা হয়। এরপর তহিদুল হাজরা লোকজন নিয়ে আমাদের পথ আটকে বেড়া দিয়ে দেন। আমরা ভেবছিলাম রাগের মাথায় বেড়া দিয়েছেন, কিছুদিন গেলে হয়তো খুলে দিবেন। কিন্তু বযখন দেখি পথের বেড়া খোলেননি তখন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে যাই। তারাও একাধিকবার সালিস মিমাংসার মাধ্যমে আমাকে পথ দিতে বলেছেন কিন্তু তহিদুল পথ দেয়নি। আমরা এক ধরনের বন্দি জীবন-যাপন করছি। আমি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুষ্ঠভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমার পথের জমি ফেরত চাই।
মিকাইল আরও বলেন, আমরা যে জমি থেকে যাতায়াত করতাম, ওই জমিও তহিদুলের নয়। তিনি জোরপূর্বক ওখানে বেড়া দিয়েছেন।
মিকাইলের স্ত্রী আফিরুন বেগম বাংলানিউজকে বলেন, বাড়িতে হাঁস-মুরগি ও গরু ছাগল পালন করে ছেলে-মেয়ে পড়াশোনা করাচ্ছি। আমাদের যাতায়াতের পথ আটকে দেওয়ায় এমন বিপদে পড়েছি যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। মাঝে আমার একটি গরু অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। রাস্তা বন্ধ থাকায় গরুটিকে চিকিৎসকের কাছেও নিতে পারিনি। আবার চিকিৎসক বাড়িতে আনব সে ব্যবস্থাও আমার ছিল না রাস্তার কারণে।
মিকাইলের মেয়ে মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী লাবনী খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, শুকনো মৌসুমে মানুষের ঘের, ধানের জমিসহ সুবিধা মতো স্থান থেকে যাতায়াত করি। কিন্তু বৃষ্টির মৌসুমে পানির ভেতর থেকে সাঁতরে বাড়ির বাইরে যেতে হয়। কিভাবে এখানে বসবাস করবো। তহিদুল কাকার যদি আমাদের ওপর এতোই রাগ থাকে তাহলে আমাদের অন্য জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করে দিক এখান থেকে চলে চাই। এই কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন লাবনী।
হীরু শেখ, মারুদ শেখ, আনোয়ার হোসেনসহ স্থানীয় কয়েকজন বলেন, মিকাইলের যাতায়াতের রাস্তাটি ছিল প্রভাষ ও সুভাষ ঘোষের মালিকানাধীন জমি। দীর্ঘদিন মিকাইল যাতায়াত করার কারণে, প্রভাষ এবং সুভাষ যখন তাদের জমি তহিদুল হাজরার বাবা খলিল হাজরার কাছে বিক্রি করেছিলেন তখন ৪ শতাংশ জমি কম বিক্রি করেছিলেন। যাতে মিকাইলের হাঁটার পথে কোনো সমস্যা না হয়। তারপরও তহিদুল মিকাইলের হাঁটার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা অনেক অনুরোধ করেছি, কিন্তু তহিদুল শোনেননি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মঞ্জুর রহমান ফরাজী বাংলানিউজকে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বসবাস করছি। মিকাইল ও তহিদুলের জমি পরিমাপও করা হয়েছে। তহিদুল যে জমিতে বেড়া দিয়েছে ওখানে পূর্বের মালিক প্রভাষ ও সুভাষ ঘোষের কিছু জমি রয়েছে। ওই জমি ছেড়ে দিলে মিকাইল সুষ্ঠুভাবে তার বাড়ি থেকে বের হতে পারতেন। কিন্তু তহিদুল কোনোভাবেই আমাদের কথা শুনতে নারাজ।
রাজনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার আ. হান্নান ডাবলু বাংলানিউজকে বলেন, তহিদুলের জমির মধ্যে পূর্বের মালিক প্রভাষ ও সুভাষ ঘোষের জমি রয়েছে। ওই জমি টুকু ছেড়ে দেওয়ার জন্য আমরা তহিদুল হাজরাকে বলেছি।
এ বিষয়ে তহিদুল হাজরা সাংবাদিকদের বলেন, আমার শত্রুর সঙ্গে আমি কোনো আপস করবো না। সে কোনো জায়গা দিয়ে বের হবে সেটা তার ব্যাপার।
রামপাল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কবীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কানো চলাচলের পথ বন্ধ করাটা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটির কাছ থেকে কোনো অভিযোগ বা আবেদন পেলে দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের ব্যবস্থার আশ্বাস দেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০২১
এনটি