ঢাকা, শুক্রবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩২, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

আ. লীগ নেতাদের ‘জামাই আদর’ করায় এখন আদালতে হুমকি দিচ্ছে: রিজভী 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২৫
আ. লীগ নেতাদের ‘জামাই আদর’ করায় এখন আদালতে হুমকি দিচ্ছে: রিজভী 

ঢাকা: গ্রেপ্তার শাজাহান খানরা ‘জামাই আদরে’ থেকে এখন আদালতে এসে সরকারকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেশের গণতান্ত্রিক শক্তির প্রত্যাশার প্রতিফলন খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের সময় হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি থাকলেও গণতন্ত্রকে মজবুত কাঠামো তৈরির প্রস্তুতির অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।

 

তিনি আরও বলেন, পতিত স্বৈরাচারের দোসর, খুনের আসামিরা, প্রকাশ্যে আদালতে মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়া, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিচার চেয়ে বক্তব্য রাখে। হাসিনার গণহত্যাকারী বাহিনীর নেতারা দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের ভয়াবহ অপশাসনের জন্য ক্ষমা চাওয়া তো দূরে থাক, উল্টো আদালতে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। হাজারো শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আরও বড় ফ্যাসিস্ট হয়ে ফিরে আসার হুমকি দিচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) নয়া পল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ভারতে পলাতক হাসিনা একের পর এক হুংকার দিচ্ছে। শাজাহান খানরা আদালতে এসে সরকারকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। আদালতকে ভেংচি কাটছে, পুলিশকে থোড়াই কেয়ার করছে। হাসিনার দোসররা আসামি হয়েও আদালতে যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করছে তা মূলত অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘অকার্যকর’ প্রমাণের এক গভীর চক্রান্ত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ-প্রশাসনের নীরবতায় তারা এমন আচরণ করছে। গত ১৫ বছর বিভিন্ন পাতানো মামলায় বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতা ও আলেম-ওলামাকে ডান্ডাবেড়ি-পরিয়ে আদালতে তোলা হয়েছিল আর এখন কারাগারে ভয়াবহ অপরাধী আওয়ামী নেতাদের ‘জামাই আদরে’ আদালতে হাজির করা হচ্ছে।

রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ওরা ( আওয়ামী লীগ) পলাতক, আমাদের নেত্রী পলাতক নয়। ওদের সবাই পালিয়ে গেছে। ওরা পালিয়ে গেলে ওদের কাছে আছে প্রচুর টাকা, সেগুলো দিয়ে তারা খুনিবাহিনী, ভাড়াটিয়া বাহিনী দিয়ে আক্রমণ করছে।

রিজভী বলেন, বর্তমান সরকারের তো অবশ্যই একটা আইনগত ভিত্তি রয়েছে। এখানে সুপ্রিমকোর্ট ও রাষ্ট্রপতির একটা নির্দেশনা রয়েছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত নির্বাচিত সরকার হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সেভাবে জবাবদিহিতা থাকবে না। যদি তার আন্তরিকতা থাকে, গণমাধ্যম আছে, তবে সেটা কয়দিন? নির্বাচিত না হলে ফ্যাসিবাদের দিকে উত্তরণের সম্ভাবনা থাকে, একনায়কতন্ত্রের দিকে উত্তরণের সম্ভাবনা থাকে। বড় পরিসরে জবাবদিহিতা থাকে না, কারণ নির্বাচিত পার্লামেন্ট নেই, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নেই। সে বিষয়টাই আমি বলতে চেয়েছি।

তিনি বলেন, দল হিসেবে আমরা তো গণতন্ত্রের বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগের বেআইনি কাজ মোকাবিলার কাজ সরকারের। দল হিসেবে যদি আমরা আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করতে যাই, সেটা তো হবে এক প্রকারের গুন্ডামি। মোকাবিলা করতে সরকার ও তার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আছে।

তিনি বলেন, পাড়া-মহল্লা, পথে-ঘাটে, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের কোনো কমতি নেই। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পলাতক কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিস্টদের গলার স্বর শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। দেশের জনগণের পাচার করা টাকা পতিত স্বৈরাচারের ‘টনিক’ হিসেবে কাজ করছে। শেখ হাসিনার একটি ভরসা হচ্ছে পাচার করা টাকা, সেই টাকার জোরে দেশে নানা ঘটনা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাচ্ছে। একটি প্রবাদ আছে ‘টাকায় কথা কয়’-শেখ হাসিনা এ প্রবাদটি কাজে লাগাতে চাচ্ছে। মাফিয়া অর্থনীতির জোরে শেখ হাসিনা দেশের যে সম্পদ পাচার করেছেন, সেই সম্পদের মুনাফা দিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। পতিত ফ্যাসিবাদের বড় বড় দোসররা অনেকেই প্রশাসনের হেফাজতে ছিল, কিন্তু তারা কীভাবে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে? নিশ্চয়ই এখনও প্রশাসনের মধ্যে অনেকেই ঘাপটি মেরে আছেন, ফ্যাসিবাদের খুনি দোসরদের সহযোগীরা।

রিজভী বলেন, ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণ-অভ্যুত্থানে হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে থাকা পতিত ফ্যাসিস্টদের সহযোগীরা ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করছে। তারা কোথাও কোথাও গণহত্যাকারীদের সঙ্গে আঁতাত করে প্রকাশ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তির সহযোগিতায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ঝটিকা মিছিল করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে, আঘাত করছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের, ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে, শিল্পী-কুশলী, রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ অনেকের বাড়ি-ঘর যেমন-ভাস্কর মানবেন্দ্র ঘোষের মানিকগঞ্জের বাড়ি আগুন দিয়ে ভষ্মিভূত করা হয়েছে। কোনো কোনো পক্ষ আছেন যারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চান, তাদেরও নেপথ্য ইন্ধন না থাকলে ফ্যাসিস্টের অনুচররা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দুঃসাহস দেখাতো না।

তিনি বলেন, মাফিয়া অর্থনীতির সৃষ্টিকারীদের হোতারা আজও কেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে? যে সমস্ত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনাকে প্রকাশ্য সমর্থন দিয়ে ফ্যাসিবাদকে প্রলম্বিত করার ঘোষণা দিয়ে কাজ করেছেন, তারা আজ বহাল তবিয়তে তাদের রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী দুঃশাসনের ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচারের সঙ্গে যুক্তরা আজও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

বিএনপির এ শীর্ষ নেতা বলেন, হাট-বাজার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সেক্টরে ফ্যাসিস্টদের সিন্ডিকেট তৎপরতা বহাল তবিয়তে কাজ করে যাচ্ছে, এরাই দেশের মালিক সমিতি হিসেবে গণ্য। যে কারণে-চালের দাম হু-হু করে বাড়ছে, অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। প্রশাসনের সর্বস্তরে এখনও দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিবাদের দোসররা বিদ্যমান আছে, কারণ-তারাই সরকারের দু-একজনকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে নাকি স্বপদে বহাল রয়েছেন। এ ধরনের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রায়ই প্রকাশিত হচ্ছে।  

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলটির চেয়াপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিএনপি নেতা মীর সরাফত আলী সপু, হাবিবুর রহমান হাবিব, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, ছাত্রদলের সহসভাপতি তৌহিদুর রহমান আউয়াল।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২৫
ইএসএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।