ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩২, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

দ্য উইক ম্যাগাজিনে কাভার স্টোরি: বাংলাদেশে পরিবর্তন তারেক রহমানের সামনে সুযোগ

নিউজ ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২৫
দ্য উইক ম্যাগাজিনে কাভার স্টোরি: বাংলাদেশে পরিবর্তন তারেক রহমানের সামনে সুযোগ তারেক রহমানকে নিয়ে কাভার স্টোরি করেছে ‘দ্য উইক’

সংবাদভিত্তিক প্রখ্যাত সাপ্তাহিক সাময়িকী ‘দ্য উইক’ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে নিয়ে কাভার স্টোরি (প্রচ্ছদ প্রতিবেদন) করেছে।  প্রকাশিত এ প্রতিবেদনের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ডেসটিনি’স চাইল্ড বা নিয়তির সন্তান।

এটি লিখেছেন ‘দ্য উইক’-এর নয়াদিল্লি ব্যুরো চিফ নম্রতা বিজি আহুজা।

‘৪ মে ২০২৫’ তারিখ দিয়ে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনের ই-পেপার ফেসবুকে পোস্ট করেছেন তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন। এছাড়া বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেজেও একই ই-পেপার শেয়ার দেওয়া হয়েছে। অবশ্য সাময়িকীর প্রতিবেদন হওয়ায় এর লিংক দ্য উইকের ওয়েবসাইটে এখন পর্যন্ত মেলেনি।

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি ভাঙার নানাচেষ্টা এবং দল টিকিয়ে রাখতে তারেক রহমানের নেতৃত্বের ভূমিকা তুলে ধরে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপি ভাঙার চেষ্টা করলেও তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলটি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। ‘দিন দিন জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় তারেক রহমান পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে’, এক বিশ্লেষকের এমন বক্তব্য প্রতিবেদনে উদ্ধৃত হয়েছে।

জুলাই বিপ্লবের পর আসন্ন নির্বাচনে তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে বিষয়ে ইঙ্গিত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে পরিবর্তন তারেক রহমানের সামনে একটি সুযোগ এনে দিয়েছে।  

প্রতিবেদনে তারেক রহমানের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিষ্ঠা, মা খালেদা জিয়ার নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় স্বৈরাচার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু হওয়ার চেষ্টার মধ্যে ৫৯ বছর বয়সী তারেক রহমান এখন তার মায়ের (বিএনপি প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া) পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন।

এতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারকে (গণঅভ্যুত্থানে) সরিয়ে দেওয়ার পর বিএনপি দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। লন্ডনে থাকা তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন তা নিয়ে ঢাকায় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করছে।

দলকে সংগঠিত রাখতে তারেক রহমান নিয়মিত ভার্চুয়ালি সভা-সমাবেশে বক্তব্য দেন। তৃণমূলেও তার সরাসরি যোগাযোগ আছে।  

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকায় নামলে তার জীবনচক্রের পূর্ণতা সম্পন্ন হবে। আশা করা হচ্ছে, আসন্ন নির্বাচনে তারেক রহমান রহমানই দলের মুখ হিসেবে আবির্ভূত হবেন।

প্রতিবেদনে তারেক রহমানের রাজনৈতিক পরিকল্পনা-প্রতিশ্রুতি তুলে ধরতে তার কয়েকজন উপদেষ্টার বক্তব্য তুলে ধরা হয়।

তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন বলেন, তারেক ইতোমধ্যে একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা করেছেন।

ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার বলেন, চাকরিজীবী, জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক বা শ্রমজীবী যেই হোন না কেন, আমরা তাদের সমান সুযোগ, ন্যায্য মজুরি এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দিতে চাই। আমরা একটি জ্ঞানভিত্তিক ও উন্নয়নকেন্দ্রিক রাজনীতি গড়ে তুলতে তারেকের দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়ন করতে চাই।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকায় গিয়ে তারেক রহমান কতটা দক্ষতার সঙ্গে বাংলাদেশের নেতৃত্ব নিতে সক্ষম হবেন সেদিকে নজর থাকবে সবার।  

জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিফ বিন আলী বলেন, (ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের নির্যাতনে) তিনি নির্বাসনে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন এবং সামরিক-প্রশাসনিক কর্তৃত্ব তার কাছ থেকে লিখিত অঙ্গীকার নিয়েছিল যে তিনি ভবিষ্যতে আর রাজনীতিতে জড়াবেন না। এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছিল।

১৬ বছরের নির্বাসনকালে তারেক রহমান ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন ক্ষতির শিকার হন (তিনি তার ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোকে হারান) এবং বহু আইনি ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। তবু তিনি বিএনপিতে প্রভাবশালী থেকে যান এবং দলকে একত্রিত রাখেন।  

আসিফ বিন আলী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা চালালেও তারেক রহমান ও (বিএনপির মহাসচিব) মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখেন।

তারেক রহমান তার তারুণ্যে ১৯৮৮ সালে রাজনীতিতে পদার্পণ করেন। ১৯৯১ সালে দলের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিলেও পরে খুব সক্রিয় থাকেননি, যদিও সেবার বিএনপি সরকার গঠন করে। ২০০১ সালের নির্বাচনী প্রচারে পুনরায় সক্রিয় হন এবং বিএনপি ওই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে। এ সময় দলে তার উল্লেখযোগ্য প্রভাব তৈরি হয়। তবে মায়ের শাসনামলে (২০০১-২০০৬) তার বিরুদ্ধে অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ এবং সরকারে কোনো আনুষ্ঠানিক পদে না থেকেও ক্ষমতা প্রয়োগের অভিযোগ আনা হয়।

২০০৭ সালে ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হলে তারেক রহমানও তার মায়ের সঙ্গে বন্দী হন। ‘ওয়ান-ইলেভেন’ খ্যাত ওই সরকারের আমলে অনেক শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের শিকার হন। তারেক রহমান ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে মুক্তি পান এবং চিকিৎসার জন্য প্যারোলে লন্ডনে যাওয়ার অনুমতি পান।

বিদেশে থাকাকালে তারেক রহমান ২০০৯ সালে বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালে ওই পদে পুনর্নির্বাচিত হন তিনি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে কথিত দুর্নীতির মামলায় তার মাকে কারাগারে পাঠানোর পর থেকে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।  

আসিফ বিন আলী বলেন, তারেক রহমান বাংলাদেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে রয়েছেন, কারণ তার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২৫
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।