ঢাকা, সোমবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২, ১২ মে ২০২৫, ১৪ জিলকদ ১৪৪৬

রাজনীতি

পারিবারিক আবহে হাস্যোজ্জ্বল খালেদা জিয়া

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:১৫, মে ১১, ২০২৫
পারিবারিক আবহে হাস্যোজ্জ্বল খালেদা জিয়া ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ও সেজ বোন সেলিনা ইসলামের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

ঢাকা: চিকিৎসার উদ্দেশে লন্ডন গিয়ে পরিবারকে পাশে পান বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘ আট বছর পর দেখা হয় বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে।

সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান ও নাতনি জায়মা রহমানের সঙ্গে দারুণ সময় উপভোগ করেন। ওই দীর্ঘ চার মাস ছেলে তারেক রহমান ছিলেন মায়ের পাশে ছায়া হয়ে।  

চিকিৎসা শেষে স্বস্তি নিয়ে দেশে ফিরেও পারিবারিক আবহে বেশ উৎফুল্লে সময় কাটাচ্ছেন বেগম জিয়া। কারণ দুই পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শামিলা রহমানে সঙ্গে নিয়েই দেশে ফিরেছেন তিনি। গত ৬ মে বিমানবন্দর থেকে নেমেই সোজা চলেন প্রিয় বাসভবন গুলশানের ফিরোজায়। চারদিন বিশ্রাম নিয়ে এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গুলশানে ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দারের বাসায় গেছেন তিনি।  

জানা গেছে, শনিবার (১০ মে) রাত ৯টা ১৩ মিনিটে ফিরোজা থেকে ভাইয়ের বাসার উদ্দেশ্যে একটি গাড়িতে রওনা হন খালেদা জিয়া। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন দুই পুত্রবধূ— ডা. জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শামিলা রহমান। গাড়ি সড়কে নামতেই দুই পাশে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন ও বিএনপি চেয়ারপারসনের দীর্ঘায়ু কামনা করেন।  

পৌঁছানোর পর বেগম জিয়াকে স্বাগত জানান তার ভাই শামীম ইস্কান্দার, ভাবি কানিজ ফাতেমা এবং প্রয়াত ভাই সৈয়দ ইস্কান্দারের স্ত্রী নাসরিন আহমেদসহ অন্যান্য স্বজনরা।  

সেখানে আত্মীয়-স্বজনসহ অনেকের সঙ্গে হাসিখুশি সময় কাটিয়েছেন খালেদা জিয়া। সেই আনন্দময় মুহূর্তের কিছু ছবিও প্রকাশ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

এসব ছবিতে দেখা গেছে ভাই শামীম ইস্কান্দার বাসায় ড্রয়িং রুমে সোফায় হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে বসে আছেন খালেদা জিয়া। তার পরনে গাঢ় নীল সঙ্গে লাল আর হালকা কমলা রঙের মিশেলে সিল্ক শাড়ি। গলায় মুক্তার মালা। তার চারপাশে ঘিরে আছেন ভাইয়ের পরিবারের অন্য সদস্যরা।  

দীর্ঘদিন পর বেগম জিয়া পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিলেন। আওয়ামী লীগ আমলে ক্যান্টনমেন্টের বাসায় তাকে থাকতে না দিলে ভাই শামীম ইস্কান্দারের বাসায় উঠেছিলেন বেগম জিয়া। বহু বছর পর গতকাল আবার সেখানে গেলেন।

এসময় খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল একেএম শামসুল ইসলাম শামস, বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোহাম্মদ আমান উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

ছোট ভাইয়ের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল খালেদা জিয়া

গত ৬ মে লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ মতো পূর্ণ বিশ্রামে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। চিকিৎসকরা নিয়মিত তার স্বাস্থ্যের ফলোআপ করছেন। চিকিৎসকরা রোস্টার করে বাসায় গিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আসছেন। দ্য লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকদের পারমর্শ অনুয়ায়ী তার চিকিৎসা চলছে। বিএনপির চেয়ারপারসন মেডিকেল বোর্ডের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে আছেন।

বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের পুরো বিষয় সমন্বয় করছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়া আগের চেয়ে এখন অনেকটাই সুস্থ।

ভাইয়ের বাসায় খালেদা জিয়ার সময় কাটানোর প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা শিমুল বিশ্বাস জানান, ম্যাডাম এমনিতেই সচরাচর বের হন না। পরিবারের এক অনুষ্ঠানে তিনি সেখানে  গিয়েছিলেন, পরিবারের সদস্যরা ভীষণ খুশি হয়েছে।

১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে এবং ৬ বছর প্রায় বন্দিজীবন যাপন করার পরও জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন খালেদা জিয়া। বিষয়টি তার চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার দিন স্পষ্টই উপলব্ধি করা গেছে। দেশের পতাকা হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাকে স্বাগত জানাতে দেখা গেছে হাজার হাজার জনতাকে।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দুর্নীতির দুই মামলায় কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল বেগম খালেদা জিয়াকে। তিনি দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাহী আদেশে ২০২০ সালে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করলেও বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেয়নি। কার্যত তিনি অন্তরীণ ছিলেন। বিএনপির পক্ষ থেকে তার জামিনের আবেদন করা হলেও প্রত্যাখ্যাত হয়। অথচ একই ধরনের মামলায় দণ্ডিত এইচ এম এরশাদ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী ও নাজমুল হুদা জামিন পেয়েছেন। কারাবন্দি অবস্থায় হাজি সেলিমকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে দেওয়া হয়েছে। তাই দেশে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার অস্ত্রোপচারসহ চিকিৎসা চলছিল।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরের দিন খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়। গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যান বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। টানা ১৭ দিন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৫ জানুয়ারি থেকে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় যান খালেদা জিয়া।

এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।