ঢাকা, রবিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩২, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ২১ শাওয়াল ১৪৪৬

সারাদেশ

দিনাজপুরে ৩১৬ চালকলের লাইসেন্স বাতিল 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২৫
দিনাজপুরে ৩১৬ চালকলের লাইসেন্স বাতিল 

অভ্যন্তরীণ আমন মৌসুমে সরকারের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন না করায় দিনাজপুরের ৩১৬টি চালকল ও খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী লাইসেন্স বাতিল করেছে খাদ্য বিভাগ। বাতিলকৃত চালকলের মধ্যে ২৯৬টি সিদ্ধ ও ২০টি আতপ চালকল রয়েছে।

 

দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি অফিস আদেশে গত বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিষয়টি জানানো হয়েছে।  

আদেশে বলা হয়েছে- লাইসেন্স বাতিলকৃত মিলগুলো ধান থেকে চাল উৎপাদন কার্যক্রম, চাল বাজারজাতকরণ ও মিলে ধান-চাল মজুদ করতে পারবে না। ওই নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটলে ধান-চাল সরকারি খাতে বাজেয়াপ্ত করাসহ সংশ্লিষ্ট চালকল মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

লাইসেন্স বাতিলকৃত সিদ্ধ চালকলের মধ্যে দিনাজপুর সদর উপজেলায় ৪০টি চালকল, বোচাগঞ্জে ৬০টি, বিরলে ৪টি, কাহারোল উপজেলায় ১৫টি, বীরগঞ্জে ১১টি, খানসামা উপজেলায় ৪টি, চিরিরবন্দরে ৩৩টি, পার্বতীপুরে ১৬টি, ফুলবাড়ী উপজেলায় ৪০টি, বিরামপুর উপজেলায় ৭টি, হাকিমপুর উপজেলায় ২টি, নবাবগঞ্জ উপজেলায় ২৮টি চালকল, ঘোড়াঘাট উপজেলায় ৩৭টি চালকল রয়েছে।  

আর যে ২০টি আতপ চালকলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে তার মধ্যে দিনাজপুর সদর উপজেলার ১৯টি এবং চিরিরবন্দর উপজেলার একটি চালকল রয়েছে।  

দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরকারের খাদ্য সংগ্রহ অভিযানে চলতি আমন মৌসুমে এই জেলায় সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২ হাজার ৮৭২ মেট্রিক টন আর আপত চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৮০৬ মেট্রিক টন। ২০২৪ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই সংগ্রহ অভিযান চলে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

তবে এই সময়ের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ মিল থেকে ৪৮ হাজার ৭২৪ দশমিক ৪০ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, ১১ হাজার ৩০৬ দশমিক ৪৬ মেট্রিক টন আতপ চাল ও ২ হাজার ২৫৮ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ হয়েছে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার ৯৮ শতাংশ সিদ্ধ চাল, ৯৬ শতাংশ আতপ চাল ও ১৩ শতাংশ ধান সংগ্রহ করতে পেরেছে জেলা খাদ্য বিভাগ।  

এছাড়া ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৭৯১ মেট্রিক টন। সরকারের এই অভিযানে ধান-চাল সরবরাহের জন্য জেলার ৯১১টি সিদ্ধ চালকল এবং ৮৩টি আতপ চালকল চুক্তিবদ্ধ হয়।  

এরই মধ্যে গত ৮ এপ্রিল খাদ্য অধিদপ্তরের সংগ্রহ বিভাগ অভ্যন্তরীণ আমন ২০২৪-২৫ মৌসুমে চুক্তিযোগ্য ছিল কিন্তু চুক্তি সম্পাদন করেনি এমন চালকল সমূহের খাদ্য বিভাগীয় লাইসেন্স বাতিল করার নির্দেশনা দেন। সেই নির্দেশনা মোতাবেক জেলার ৩১৬টি চালকলের মিলিং এবং খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী লাইসেন্স বাতিল করে খাদ্য বিভাগ।  

বাংলাদেশ মেজর ও অটোমেজর হাসকিং মিল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি শহীদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন জানান, মৌসুম শুরু থেকেই বাজারে ধানের দাম ঊর্ধ্বমুখী। যখন সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হয়েছে তখন বাজার যাচাই না করেই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে অনেক মিল মালিকই সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়নি। আবার যখন বাজারে ধান থাকে তখন কৃষকরা যে দামে ধান বিক্রি করে কিছুদিন পরেই সেই দাম বৃদ্ধি পায়। অবৈধ মজুদদদাররা কৃষকদের ধান ক্রয় করে এবং পরে সিন্ডিকেট করে ধানের দাম বৃদ্ধি করে। এসব মজুদদারদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে ধান কিংবা চালের দাম বৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব না। এজন্য বাজার মনিটরিং বা ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে হবে। মিল মালিকদের দায়ী করলে হবে না, বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যদি সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হয় তাহলে সব মিলারই সরকারকে চাল দেবে।  

দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী জানান, যে-সব সব মিল চুক্তি করেনি এবং চুক্তি করেও যারা চাল দেবে না তাদের বিরুদ্ধে সরকারের অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য নীতিমালা রয়েছে সেই নীতিমালা অনুযায়ী লাইসেন্স বাতিল এবং এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সংগ্রহ কার্যক্রম বাতিল রাখা ও শাস্তির বিধান রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।