ঢাকা, সোমবার, ৮ বৈশাখ ১৪৩২, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ২২ শাওয়াল ১৪৪৬

সারাদেশ

দিনে ২০০ কাপ চা বিক্রি করেন রুবেল!

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২৫
দিনে ২০০ কাপ চা বিক্রি করেন রুবেল!

মাদারীপুর: দীর্ঘ নয় বছর প্রবাস জীবন কাটিয়েছেন। পরিবার-পরিজন ছেড়ে দূর প্রবাসে থাকার কষ্ট তাড়া করে ফিরত শিবচরের রুবেল মোড়লকে।

প্রবাসের পাঠ চুকিয়ে দেশে ফেরেন প্রায় দুই বছর আগে। দেশে ফিরেই চিন্তায় পড়ে যান কি করবেন, তা নিয়ে।  

শিবচরে পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা রুবেল মোড়লের মনে তখন উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়। পরিবারের কাছে থেকে ভালো আয়-রোজগার কীভাবে করা যায়, সেই চিন্তা থেকে অবশেষে ‘শাহী সুলতানি তান্দুরি চা অ্যান্ড কফি হাউস’ নামে একটি চায়ের দোকান দেন তিনি।

শিবচরের পদ্মাতীরের কাওড়াকান্দি ঘাট সংলগ্ন বেইলি ব্রিজ এলাকায় একটি দোকান নিয়ে শুরু করেন তান্দুরি চাসহ নানান রকমের চায়ের ব্যবসা। পদ্মাপাড়ের এ স্থানটি প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে জমে ওঠে ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণায়। এ জনসমাগমকে কাজে লাগানোর চিন্তা থেকেই রুবেল মোড়লের বাহারি চায়ের দোকানের যাত্রা শুরু হয়। পদ্মাপাড়ের এ বেইলি ব্রিজের চারপাশ সুস্বাদু খিচুরির জন্য দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত।  

জমজমাট এ জায়গায়টিতে গিয়ে দেখা গেছে, দোকানের আলো-আঁধারির মাঝে গল্প করছেন নানান বয়সী মানুষ। সামনে মাটির ছোট্ট কাপে ধোঁয়া ওঠা চা। চায়ের কাপে চুমুকের সঙ্গে জমে উঠছে গল্প-আড্ডা। আর চা বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন রুবেল মোড়ল।  

আলাপচারিতায় তিনি বলেন, দুই বছর আগে বিদেশের চিন্তা বাদ দিয়ে বাড়ির পাশেই এ চায়ের দোকান দিয়েছি। বর্তমানে দৈনিক মোটামুটি দুইশ কাপ চা বিক্রি হয়। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১২টা/১টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে।

তিনি বলেন, আমাদের পদ্মাপাড়ের কাওড়াকান্দি ঘাট দিন দিন পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠছে। পদ্মার পাড়ে ঘুরতে আসা মানুষের আড্ডা জমে এখানে। লোকজনের আড্ডাকে ঘিরেই আমি চায়ের দোকান দেওয়ার চিন্তা করি। আলহামদুলিল্লাহ ভালো বিক্রি হয়। আমার এখানে নানান পদের চা আছে। বেশি বিক্রি হয় তান্দুরি, হরলিক্স, চকলেট, বাদামি চা।

চাপ্রেমীরা জানান, পদ্মার পাড়ে ঘুরতে আসার পর এখানকার বেইলি ব্রিজ নামক বাজারে ভিড় করেন লোকজন। এখানে সন্ধ্যার পর নানা ধরনের স্ট্রিটফুড পাওয়া যায়। বিশেষ করে এখানকার খিচুরির সুনাম রয়েছে। আর এ চায়ের দোকানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা চলে। বেশ ভালো চা হয় এখানে। পদ্মাপাড়ে ঘোরাঘুরির পর এখানকার চা খেতেই হয়।

পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা শিবচরের নাজমুল হাসান বলেন, এ দোকানের চায়ের বেশ সুনাম শুনেছি। সেজন্য এখানে এলাম। পদ্মাপাড়ে ঘোরাঘুরি করে রুবেল ভাইয়ের চা খেলাম। বেশ সুস্বাদু! তান্দুরি চা বেশ ভালো লেগেছে। নানা রকম চা আছে।

রুবেল মোড়ল জানান, এখানে ৩০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০ টাকা পর্যন্ত দামের চা পাওয়া যায়। শীতে ব্যাম্বু চা বিক্রি হয়েছে। মালাই চা ও তান্দুরি চা বেশি বিক্রি হয়। শিগগিরই জাফরান চা তৈরি করা হবে। বর্তমানে কাজু বাদাম, কাঠ বাদাম ও চিনা বাদাম মিক্সের একটি চা রয়েছে। যা খুবই সুস্বাদু।

বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় দোকানে একজন সহকারী নিয়েছি। চা আমিই বানাই। আমার ছয় মাস লেগেছে চা বানানো শিখতে। আল্লাহর রহমতে ভালোই বিক্রি হয় প্রতিদিন। ঈদ এবং শীতে প্রচুর ভিড় থাকে, বলেন রুবেল।

শিবচরের পদ্মাপাড় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে। প্রতিদিন বিকেল হতেই দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখোর থাকে কাওড়াকান্দি ঘাট সংলগ্ন পদ্মার পার। আর মানুষের আগমন ঘিরে এ এলাকায় গড়ে উঠেছে একাধিক স্ট্রিটফুডের দোকান। যা উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখাচ্ছে এ এলাকার তরুণদের।  


বাংলাদেশ সময়: ১১২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২৫
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।