ঢাকা, শনিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২, ০৩ মে ২০২৫, ০৫ জিলকদ ১৪৪৬

সারাদেশ

রঙিন ভুট্টা চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন গোমস্তাপুরের সুমন

এ কে এস রোকন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:৫২, মে ২, ২০২৫
রঙিন ভুট্টা চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন গোমস্তাপুরের সুমন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে প্রথমবার ১০ কাঠা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে রঙিন ভুট্টা চাষ করা হয়েছে।  

উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের মৃধাপাড়ার মো. রবিউল আওয়াল সুমন এ রঙিন জাতের ভুট্টার চাষ করেছেন।

এর আগে চলতি অর্থবছরে গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সুমনকে রঙিন ভুট্টা চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়।  

স্বল্প খরচ,অল্প সেচ, দেখতে আকর্ষণীয় এবং পুষ্টিগুণ বেশি হওয়ায় অন্যদের মাঝে এ ফসলটি চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

তার ভুট্টা ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, ১০ কাঠা জমিতে কালো, লাল, হলুদ, সাদা ও ধূসর রঙের ভুট্টা ধরেছে গাছে। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় গ্রামের কৃষক ও সাধারণ লোকজন রঙিন ভুট্টা দেখার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন। অনেকে আগামীতে চাষ করার জন্য সুমনের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ নিচ্ছেন।  

স্থানীয়রা জানান, মৃধাপাড়া জায়গাটি বরেন্দ্র এলাকা হওয়ায় পানির সংকট দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে মহানন্দা নদীর পানি কমে গেলে এর প্রভাব পড়ে এ এলাকায়। তখন স্থানীয় খাঁড়ি ও পুকুরগুলো ছাড়া কোথাও পানি মেলা দায়। এ বিষয়টি মাথায় রেখে এ এলাকায় স্বল্প সেচের ফসল হিসেবে কৃষি বিভাগ বাছাই করে চীন থেকে আমদানি করা রঙিন জাতের এ হাইব্রিড ভুট্টা।

কৃষি বিভাগ এ ভুট্টা চাষের জন্য শিক্ষিত তরুণ সুমনকে বেছে নেয়। আধুনিক পদ্ধতিতে তার ১০ কাঠা জমিতে লাগানো হয় ভুট্টার বীজ।

ভুট্টার ক্ষেতে তপ্ত রোদে দেখা হয় সুমনের সঙ্গে। তিনি ২০১৪ সালে কৃষিতে ডিপ্লোমা করেন। এরপর কুমিল্লায় একটি কীটনাশক কোম্পানিতে চাকরি শুরু করেন তিনি। তবে কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ২০২০ সালে সেই চাকরি ছেড়ে দেন এবং নিজের জমিতে মাল্টা, ধানসহ নানা ফল-ফসল চাষাবাদ শুরু করেন। চলতি অর্থবছরে গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে রবিউল ইসলাম সুমনকে রঙিন ভুট্টা চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়। পরে তিনি তার জমিতে পরীক্ষামূলক এ ভুট্টা চাষ করেন এবং সফলতা পান। রঙিন ভুট্টা চাষে তার প্রায় নয় হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তার জমিতে ফলন হয়েছে আনুমানিক ১৪ মণ ভুট্টা। নতুন জাতের আকর্ষণীয় ভুট্টা হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা বেশি। তাই দুই হাজার টাকা মণ দরে অন্তত ২৮ হাজার টাকায় ভুট্টা বিক্রি করার আশা তার।

রঙিন ভুট্টা চাষি কৃষক রবিউল আওয়াল সুমন বলেন, প্রথমে আমি কৃষি অফিসের একটি প্রদর্শনীতে যাই। সেখান থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ রঙিন ভুট্টা চাষ শুরু করি। প্রথম দিকে একটু সমস্যা হচ্ছিল চাষাবাদে। তারপর আস্তে আস্তে আবহাওয়ার সঙ্গে ম্যাচ করার পর ভুট্টার গাছগুলো খুব সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে। যখন ফুল আসে, তখন হঠাৎ করে দেখলাম একটি ভুট্টার ভেতরেই নানা রং- লাল, কালো, সাদা, হলুদ। খুবই ভালো লাগে, এরপর কৃষি অফিসে জানালে তারাও খুব আনন্দিত হয়। এছাড়া আশপাশের মানুষজন দেখে তারাও উদ্বুদ্ধ হন। অনেকে আগামীতে এ জাতের ভুট্টা চাষ করতে চাচ্ছেন। অনেকে বীজ কিনতে চাচ্ছেন। অনেকে বলছেন, গাছ থেকেই ভুট্টাসহ দিয়ে দেন।

তিনি আরও বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এটি নতুন জাতের ভুট্টা হওয়ায় বাজারে চাহিদা বেশি। এটি খেতে খুব সুন্দর, খেতেও সুস্বাদু। এজন্য সবাই আগ্রহী হয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আশা করি, আমাদের আশপাশে এ জাতের ভুট্টা আরও চাষ হবে।

ভুট্টাক্ষেত দেখতে আসা আজিজুল নামে এক কৃষক বলেন, আমি হলুদ ভুট্টা চাষ করেছি। কিন্তু এখানে রঙিন ভুট্টা চাষ করছেন সুমন। আমিও এ ভুট্টা চাষ করতে চাই। কারণ এ ভুট্টার দাম বেশি। এগুলোর মণ প্রায় দুই হাজার টাকা আর সাধারণ ভুট্টার দাম এক হাজার টাকা মণ। তাই আগামীতে ভুট্টাটি চাষ করার পরিকল্পনা করছি আমি।

শফিকুল ইসলাম নামে আরেক কৃষক জানান, আমাদের ভুট্টার চাইতে সুমনের ভুট্টায় পানি আর সার কম লাগছে। তবে উৎপাদন বেশি হইছে। রঙিন হওয়ায় চাহিদা বেশি, দামও বেশি। তাই আগামীতে কৃষি অফিস বীজ দিলে আমিও লাগাব।

কৃষক সামশুদ্দিন আহম্মেদ বলেন, এখানে রঙিন ভুট্টা চাষ হচ্ছে। এটি দেখতে খুব ভালো। শুনছি দামও বেশি, তাই পরে এ জাতের ভুট্টা চাষ করবো। এজন্য সুমনের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের বটতলা হাটের ছাত্র জাহিদ জানান, তিনি রঙিন ভুট্টার চাষের খবর শুনে দেখতে এসেছেন এবং বাড়িতে দেখানো ও খাবার জন্য কিনে নিয়ে যাবেন।

গোমস্তাপুর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ইব্রাহিম খলিল জানান, তার দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় পানির সমস্যা দীর্ঘদিনের। জমির উচ্চতা অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি হওয়ায় সেচ সুবিধাও কম। তার এলাকায় মূলত ধান চাষ বেশি হলেও সেচ সমস্যায় অনেক জমি পতিত পড়ে থাকে। তাছাড়া অন্যান্য ফসল ও অন্যান্য জাতের ভুট্টার চেয়ে এ জাতের ভুট্টায় সেচ কম লাগায় এবং এ ধরনের প্রকল্প জেলার প্রথম হওয়ায় তিনি অনেক চিন্তা করে সুমনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেন। অতি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন, দেখতে আকর্ষণীয় ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এবং বীজটি যেখান থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, তারাই ভুট্টার ক্ষেত কিনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় কৃষককে বিক্রির জন্য বাড়তি চিন্তা করতে হচ্ছে না। তাই তার এলাকায় প্রকল্পটি পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দর্শনার্থীদের ভুট্টা খুলে দেখাচ্ছেন সুমন

গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার বলেন, এবার রাজশাহী বিভাগে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে গোমস্তাপুর উপজেলায় পাঁচটি ভুট্টা প্রদর্শনী পেয়েছিলাম। তার মধ্যে একটিতে আমরা রঙিন ভুট্টা চাষ করেছি। এ ভুট্টার বীজ সাধারণত বাজারে পাওয়া যায় না। আমরা নীলফামারিতে যোগাযোগ করে সংগ্রহ করেছিলাম। কৃষককে উদ্বুদ্ধ করে আমরা এটা চাষ করিয়েছি এবং মেশিনের মাধ্যমে ভুট্টা রোপণ করা হয়েছিল। সেটি এখন মোটামুটি হারভেস্টের পর্যায়ে চলে এসেছে। এ ভুট্টা সাধারণ জাতের ভুট্টার চেয়ে বেশি পুষ্টিকর।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী বলেন, গোমস্তাপুর উপজেলায় প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে একটি প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে রঙিন ভুট্টা চাষ করেছি। এছাড়া রঙিন ভুট্টা উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। এতে ক্যান্সার প্রতিরোধের উপাদান বেশি। যদি এটা কৃষকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে আমরা সামনে আরও বীজ সংগ্রহ করব এবং কৃষক পর্যায়ে আরও প্রচার করে সম্প্রসারণ করার চেষ্টা করব।

এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।