কুড়িগ্রাম: স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও কুড়িগ্রামের রেলসেবার মান তলানিতে। জেলার ২৫ লাখ মানুষের জন্য মাত্র একটি লোকাল ও একটি আন্তঃনগর ট্রেন।
কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ নানা প্রয়োজনে এ অঞ্চলের মানুষ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভোগান্তিতে পড়ছে প্রতিনিয়ত। এ জেলায় রয়েছে একটিমাত্র লোকাল ট্রেন, যেটি চলে চিলমারীর রমনা থেকে রংপুর পর্যন্ত।
আরেকটি আন্তঃনগর ট্রেন কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস। ট্রেনটি চলে কুড়িগ্রাম স্টেশন থেকে ঢাকা পর্যন্ত। এ আন্তঃনগর ট্রেনটিরও রয়েছে সিডিউল বিপর্যয় ও টিকিট সংকট।
প্রতিদিন গড়ে চার হাজার মানুষ শুধুমাত্র কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা যাওয়া-আসা করে। পর্যাপ্ত ট্রেন না থাকায় অধিক মূল্যে ঝুঁকি নিয়ে বাসে যাতায়াত করেন যাত্রী সাধারণ। ১৯৯০ সালে লোকসংখ্যা কম থাকলেও শুধুমাত্র এ রুটে চলতো চারটি লোকাল ট্রেন।
পাশের জেলা পঞ্চগড়ে আন্তঃনগর পাঁচটিসহ মোট ট্রেন ছয়টি, লালমনিরহাটে চারটি আন্তঃনগরসহ ডেমু, লোকাল ও কমিউটার মিলে আটটি ট্রেন চলাচল করে। নীলফামারী জেলাতেও ছয়টি আন্তঃনগরসহ মোট আটটি ট্রেন চলাচল করে। রংপুরে দুটি আন্তঃনগরসহ মোট ১০টি ও দিনাজপুরেও একইসংখ্যক ট্রেন চলাচল করলেও কুড়িগ্রামের চিত্র একেবারেই ভিন্ন।
বর্তমানে জেলায় রাজারহাট, টগরাইহাট, কুড়িগ্রাম, পাঁচপীর, উলিপুর, বালাবাড়ি ও রমনা বাজার রেলওয়ে স্টেশনসহ মোট সাতটি রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে। অতীতে এখানে দিন ও রাতে চার জোড়া ট্রেন চলাচল করলেও বর্তমানে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ও চিলমারী কমিউটার নামে মাত্র দুটি ট্রেন চলাচল করছে। তার মধ্যে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেনটি কুড়িগ্রাম-ঢাকা-কুড়িগ্রাম রুটে চলাচল করলেও চিলমারী কমিউটার চলাচল করছে কাউনিয়া-রমনা বাজার-রংপুর-লালমনিরহাট এবং লালমনিরহাট-কাউনিয়া-কুড়িগ্রাম ও কুড়িগ্রাম-কাউনিয়া-লালমনিরহাট রুটে।
চিলমারী কমিউটারকে যখন লালমনিরহাট-কাউনিয়া-কুড়িগ্রাম ও কুড়িগ্রাম-কাউনিয়া-লালমনিরহাট রুটে চালানো হয় তখন এটিকে রংপুর এক্সপ্রেস এর কানেক্টিং শাটল ট্রেন হিসেবে গণ্য করা হয়। সেদিক বিবেচনায় দেখা যায় কুড়িগ্রামে মাত্র দুটি ট্রেন চলাচল করে।
কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসে মোট আসন সংখ্যা ৬৫৩টি হলেও কুড়িগ্রামের জন্য টিকিট বরাদ্দ দেওয়া হয় মাত্র ১২২টি। এর মধ্যে অনলাইনে ৬১টি এবং কাউন্টারে ৬১টি। এসি সিট কাউন্টারে ৫টি এবং অনলাইনে ৫টি। এসি চেয়ার অনলাইনে ৬টি এবং কাউন্টারে ৬টি, শোভন চেয়ার কাউন্টারে ৫০টি, অনলাইনে ৫০টি।
এদিকে কুড়িগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম যাত্রী ছাউনি দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বর্ষাকালে বৃষ্টির সময় ছাউনি পানি পড়ে। এ সময় প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানোরও কোনো উপায় থাকে না। এ ছাড়া প্ল্যাটফর্ম উভয় দিকে বর্ধিত করা হলেও যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হয়নি। ফলে বৃষ্টির সময় যাত্রীদের ভিজে ট্রেনে উঠতে হয় এবং ট্রেন থেকে নেমে ভিজে বাড়ি ফিরতে হয়। দ্রুত প্ল্যাটফর্মের যাত্রী ছাউনি মেরামতসহ উভয় দিকে বর্ধিতকরণের দাবি জানান স্থানীয়রা।
রেল নৌ-যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার আরিফ বলেন, জেলা ওয়ারী এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে কুড়িগ্রাম থেকে শুধু ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় ২২৬টি বাস যা সারা দেশের মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক। কুড়িগ্রাম-ঢাকা রুটে দুই জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চালালেও চলবে। এছাড়া কুড়িগ্রাম-পঞ্চগড় এবং কুড়িগ্রাম -সান্তাহার রুটে একজোড়া করে আন্তঃনগর ট্রেন চালুর দাবি করেছে আমাদের গণ-কমিটি।
জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, কুড়িগ্রাম জেলার মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যে এবং নিরাপদে যাতায়াতের জন্য ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো উচিত। দেশের জনগণ যদি বিএনপিকে জনগণের সেবা করার সুযোগ দেয় তাহলে অবশ্যই এ জেলার যাতায়াতের জন্য যা করণীয় বিএনপি তাই করবে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমার আহ্বান থাকবে, এ জেলার মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ট্রেন সেবার মান বাড়ানোর দিকে দৃষ্টি দেওয়া।
বাংলাদেশ রেলওয়ের লালমনিরহাটের বিভাগীয় সংস্থাপন কর্মকর্তা মো. মোরশেদ আলম বলেন, কুড়িগ্রাম থেকে রমনা পর্যন্ত রেললাইন সংস্কার কাজ চলছে। সংস্কার কাজ শেষ হলে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনটি রমনা স্টেশন থেকে যাতায়াত করবে। অতিরিক্ত ট্রেন কুড়িগ্রামে দেওয়া হবে কিনা এ ব্যাপারে আপাতত তথ্য দিতে পারছি না।
কুড়িগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রী ছাউনি বিষয়ে তিনি বলেন, আপনি আমাকে নির্দিষ্ট তথ্য দিন, আমি যাত্রী ছাউনি মেরামতের ব্যবস্থা করছি।
আরআইএস