ঢাকা, বুধবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২, ১৪ মে ২০২৫, ১৬ জিলকদ ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কালো গাউন-টুপিতে ছেয়ে গেছে ক্যাম্পাস

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:৪০, মে ১৪, ২০২৫
কালো গাউন-টুপিতে ছেয়ে গেছে ক্যাম্পাস

চট্টগ্রাম: সমাবর্তনের একদিন আগেই কালো গাউন আর টুপিতে ছেয়ে যায় সবুজের ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সাবেকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে সবুজের আঙ্গিনা।

গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ। সেই রোদকে উপেক্ষা করে ২১ শ একরের ক্যাম্পাস মুখর গ্রেজুয়েটদের পদচারণায়।
আজকে যেন তাদের বারণের কেউ নেই। গায়ে জড়িয়ে আছে কালো গাউন। মাথায় টুপি। তরুণ-তরুণীরা ছুটছেন ক্যাস্পাসের এক অনুষদ থেকে অন্য অনুষদে। যেদিকে চোখ যায় কেবল গাউন আর গাউন। এমন দৃশ্য চোখে পড়ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ক্যাম্পসে।  

বুধবার (১৪ মে) চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয়ের পঞ্চম সমাবর্তন। অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস।  

অনুষ্ঠান শুরু হয় দুপুর ১টায়। কিন্তু তার আগেই সমাবর্তনের উৎসব ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাস জুড়ে। প্রিয় আঙ্গিনায় উপস্থিত হাজারো গ্র্যাজুয়েট। দীর্ঘদিন পর বন্ধুদের দেখা পেয়ে উচ্ছ্বসিত তারা। কেউ সেলফি তুলছেন। কেউ ব্যস্ত আড্ডায়। কারও গল্পের সঙ্গী বন্ধু-বান্ধব, বাবা-মা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।

প্রিয় শিক্ষার্থীদের একনজর দেখতে ক্যাস্পাসে এসেছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকরাও। দুইদিন আগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাস্পাস মুখর হয়ে ওঠে গ্রাজুয়েটদের পদচারণায়। মাথায় কালো টুপি, গায়ে গাউন। দল বেঁধে ছোটাছুটি করছেন প্রিয় আঙ্গিনাজুড়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পয়েন্টে শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য বসানো হয়েছে ফটোবুথ। আর এসব বুথগুলো ঘিরে আছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে সমাবর্তনের মঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ, সমাজ বিজ্ঞান, সাইন্স, জীব বিজ্ঞান, জারুল তলা, ঝুপড়ি, শহীদ মিনার জিরো পয়েন্ট, দক্ষিণ ক্যাস্পাস, ফরেস্ট্রি ও ক্যাম্পাসের  আকর্ষণীয় স্থানগুলো সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন গ্রাজুয়েটরা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পার করে কেউ চাকরিতে প্রবেশ করেছেন আবার কেউবা এখনও বেকারত্ব ঘুচানোর চেষ্টায় আছেন। তবে সমাবর্তনের অনুষ্ঠানে চাকরি বা বেকারত্ব কোনো কিছুরই যেন ছাপ নেই। সবাই মেতেছেন আনন্দ উল্লাসে।

রায়হান সোবহান। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। আইনজীবী পেশায় নিজের স্বপ্ন গঠছেন তিনি। এছাড়াও মিনি ল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী তিনি। যেখানের টাকায় পরিচালিত হয় একটি হেফজখানা ও অনুদান দেওয়া হয় গরিব অসহায় শিক্ষার্থীদের। প্রিয় বাবাকে  নিয়ে এসেছেন সমাবর্তনে। তিনি বলেন, এটি এক অন্যরকম মুহূর্ত। আমার যারা এ পর্যন্ত এনেছেন তারা হলেন আমার মা ও বাবা। আজকের এ অর্জন আমি তাদের জন্য উৎসর্গ করলাম।

আব্দুর রহমান নামের এক গ্র্যাজুয়েট বাংলানিউজকে বলেন, অনেক আগেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে গিয়েছি। আমরা সবাই বিভিন্ন স্থানে কর্মরত। সমাবর্তন উপলক্ষে ক্যাস্পাসে এসেছি, সবার সঙ্গে দেখা হলো। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সময়গুলো অনেক সুন্দর ছিলো। অনেক মিস করি।

সমাবর্তন উপলেক্ষে ক্যাম্পাসে ঠাঁই পেয়েছে জুলাইয়ের শহীদেরা। তারা আছেন গ্রাফিতির প্রতিটি তুলির আঁচড়ে, ফেস্টুনের প্রতিটি বাক্যে, মানুষের কণ্ঠে উচ্চারিত প্রতিটি স্মৃতিতে। তারা হলেন ইতিহাস বিভাগের দুই শহীদ শিক্ষার্থী—ফরহাদ হোসেন ও হৃদয় তরুয়া। তাদের সঙ্গে আছেন চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ ওয়াসিম এবং জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ।

সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছেন ২০১১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৯টি অনুষদের ২২ হাজার ৫৮৬ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৪২ জনকে পিএইচডি ও ৩৩ জনকে এমফিল ডিগ্রি দেওয়া হবে। এছাড়া ড. ইউনূসকে ডি-লিট ডিগ্রি প্রদান করা হবে। দুপুর ১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে শুরু হবে মূল অনুষ্ঠান। দীর্ঘ ১৮ বছর পর নিজ ক্যাম্পাসে আসছেন প্রধান উপদেষ্টা। সর্বশেষ নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর ২০০৭ সালে সপরিবারে নিজের ক্যাম্পাসে এসেছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বিই/এসি/টিসি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।