ঢাকা, শুক্রবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৬ মে ২০২৫, ১৮ জিলকদ ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কম দৈর্ঘ্যের নতুন কালুরঘাট সেতুর নির্মাণ ব্যয় বেশি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:২৩, মে ১৬, ২০২৫
কম দৈর্ঘ্যের নতুন কালুরঘাট সেতুর নির্মাণ ব্যয় বেশি ...

চট্টগ্রাম: কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর ‘রেল কাম রোড সেতু’র দৈর্ঘ্য হবে ৭০০ মিটার। এই সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর রেল কাম রোড সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

 

২০২৬ সালের শুরুর দিকে নতুন সেতুর কাজ শুরু হয়ে ২০৩০ সালে সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরুর কথা আছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকৌশলী আবুল কালাম চৌধুরীকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।  

বুধবার (১৪ মে) বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, সেতু নির্মাণের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে সহজ শর্তে ৮১ কোটি ৪৯ লাখ ১০ হাজার ডলার ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। যা বাংলাদেশি নয় হাজার ৫৩৪ কোটি ৪৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা (প্রতি ডলার ১১৭ টাকা হিসাবে)। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) থেকে ৭২ কোটি ৪৭ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট প্রমোশন ফ্যাসিলিটি (ইডিপিএস) তহবিল থেকে নয় কোটি এক লাখ ৮০ হাজার ডলার দেওয়া হবে।

সেতুর প্রস্তাবিত নকশা অনুযায়ী, কর্ণফুলী নদীর ওপর বিদ্যমান রেল সেতুর ৭০ মিটার উজানে নতুন সেতু নির্মিত হবে। দুই পাশে দুই লেন করে চার লেনের সেতু তৈরি হবে। এক পাশে চলবে ট্রেন, অপর পাশে বাস-ট্রাকসহ সাধারণ যানবাহন চলবে। দুই প্রান্তে নির্মাণ করা হবে ৬.২ কিলোমিটার রেলপথ (ভায়াডাক্ট)। রেলপথের জন্য নির্মাণ হবে ৪.৫৪ কিলোমিটার বাঁধ। সড়ক পথ নির্মাণ করা হবে ২.৪ কিলোমিটার। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৭০০ মিটার। পানি থেকে সেতুর উচ্চতা ১২ দশমিক ২ মিটার। ভায়াডাক্টসহ সেতুর দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৬ কিলোমিটার। এজন্য ১৪১ একরের বেশি জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।  

সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কালুরঘাটে নির্মিতব্য মূল সেতুর কিলোমিটারপ্রতি নির্মাণ ব্যয় দাঁড়াবে ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। সেতু দিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে প্রতিদিন ২০ জোড়া ট্রেন এবং দিনে প্রায় ১৫ হাজার যানবাহন চলাচল করবে।  

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘নতুন কালুরঘাট সেতুর দৈর্ঘ্য কম হলেও ভায়াডাক্ট, বাঁধসহ বিভিন্ন কারণে নির্মাণ ব্যয় বেশি হবে। প্রকল্পে অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) প্রাথমিক সমীক্ষা করেছে। এর প্রেক্ষিতে নির্মাণ ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। দরপত্র আহ্বানের পর চূড়ান্ত ব্যয় নির্ধারণ করা হবে’।

তিনি বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি কর্ণফুলী নদীর ওপর নতুন একটি কালুরঘাট সেতু নির্মাণ। এখন যে সেতুটি আছে, ১৯৩১ সালে সেটি নির্মাণ করা হয়েছিল। যদি এর মেয়াদকাল ৮০ বছরও ধরা হয়, তবে ২০১১ সালে এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, ইতিমধ্যে সেতু নির্মাণের জন্য পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরপর ডিজাইন চূড়ান্ত করা হবে। সব ঠিক থাকলে ২০৩০ সালে সেতু দিয়ে যানবাহন ও ট্রেন চলাচল করবে।

কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত ৯৩ বছরের পুরোনো কালুরঘাট সেতু দিয়ে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া ও রাঙ্গুনিয়ার মানুষ নগরে আসা-যাওয়া করেন। প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষ নদী পারাপার হন। প্রায় ১৫ মাস বন্ধ থাকার পর ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কারকাজ শেষে গত বছরের ২৭ অক্টোবর যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় এই সেতু। একমুখী সেতু হওয়ায় ট্রেন এলে সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখতে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৫
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।