চলতি বছরের শুরুতে চীনের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ডিপসিক পুরো পৃথিবীকেই চমকে দেয়। ডিপসিক-এর ওপেন-সোর্স এআই মডেল তৈরি যে খরচ হয়, তা একইরকম বড় ভাষা মডেল তৈরির খরচের একটি ভগ্নাংশ মাত্র।
২০১৭ সালে চীন তার নতুন প্রজন্মের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এআই উন্নয়নের জন্য সেই পরিকল্পনা একটি পর্যায়ক্রমে পদ্ধতির রূপরেখা দেয়। পরিকল্পনা অনুসারে, চীন ২০৩০ সালের মধ্যে এআই তত্ত্ব, প্রযুক্তি এবং প্রয়োগের সামগ্রিক উন্নয়নে বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে এগোচ্ছে। ওই সময়ের মধ্যে এআই উদ্ভাবনে একটি প্রথম সারির বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে দেশটি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে ওই লক্ষ্য অর্জনে উঠেপড়ে লেগেছে চীন। প্রযুক্তিটির নিখুঁত বিকাশের লক্ষ্যে দেশটির নিজস্ব শক্তি কাজে লাগানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর সম্প্রতি জোর দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। উচ্চমানের মাইক্রোচিপস এবং মৌলিক সফটওয়্যারের মতো প্রযুক্তি তৈরিতে চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে তিনি চেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান।
সম্প্রতি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির রাজনৈতিক ব্যুরোর একটি গ্রুপ স্টাডি অধিবেশনে সভাপতিত্ব করার সময় তিনি এসব মন্তব্য করেন।
শি বলেন, নতুন প্রজন্মের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই প্রযুক্তির বিকাশের মাধ্যমে চীন স্বনির্ভর হবে। দেশটি প্রযুক্তিটির প্রয়োগভিত্তিক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেবে। চীনের এআই খাতের সুস্থ ও সুশৃঙ্খল অগ্রগতিকে উপকারী, নিরাপদ এবং ন্যায়সংগত দিকে এগিয়ে নেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কনীতির ঘোষণা এবং বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে শিল্প ও সরবরাহ শৃঙ্খলের ব্যাঘাতের মতো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এসবের মধ্যেই উচ্চ প্রবৃদ্ধির জন্য এআই উন্নয়ন করতে চান শি।
২০২৫ সালের সরকারি কর্ম প্রতিবেদনে, চীন তার উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে ডিজিটাল প্রযুক্তিকে কার্যকরভাবে এক করার অঙ্গীকার করেছে। ওই ব্যবস্থায় বড় মাপের এআই মডেলের ব্যাপক প্রয়োগ করা যাবে। নতুন প্রজন্মের বুদ্ধিমান এবং স্মার্ট উৎপাদন সরঞ্জাম তৈরি করার পরিকল্পনাও দেশটির আছে। সেসবের মধ্যে থাকছে বুদ্ধিমত্তা দিয়ে চালিত নতুন যানবাহন এবং বুদ্ধিমান রোবট।
গ্রুপ স্টাডি অধিবেশনে শি জিনপিং উল্লেখ করেন, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি এআই উন্নয়নে খুব গুরুত্ব দিচ্ছে। চীন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর মডেলের শীর্ষস্তরের ডিজাইন উন্নত করে এবং বাস্তবায়নের জোর চেষ্টা চালায়। ফলে দেশটির এআই শক্তির সামগ্রিক এবং পদ্ধতিগত অগ্রগতি হয়।
তবে চীনা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মূল ক্ষেত্রগুলোতে মৌলিক তত্ত্ব এবং মূল প্রযুক্তির মতো জায়গাগুলোতে এখনো ফাঁক এবং ঘাটতি রয়েছে, তা শি জিংপিংয়েরও জানা আছে। সেসব দুর্বলতাকে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় বিজ্ঞান-প্রযুক্তি উদ্ভাবন, শিল্প উন্নয়ন এবং এআই-এর প্রয়োগ ব্যাপকভাবে এগিয়ে নিতে চেষ্টা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট।
এআই নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়া উন্নত করার এবং মডেলটির উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তার ওপর শি জোর দেন। এআই যে নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য এবং নিয়ন্ত্রণযোগ্য, তা নিশ্চিত করতে প্রযুক্তি পর্যবেক্ষণ, প্রাথমিক ঝুঁকি সতর্কতা এবং জরুরি পরিস্থিতিতে সাড়া দেওয়ার ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর তিনি জোর দেন।
শি বলেন, এআই উন্নয়নে প্রথম হওয়ার সুবিধা পেতে এবং প্রতিযোগিতামূলক প্রান্ত নিশ্চিত করতে মৌলিক তত্ত্ব, পদ্ধতি এবং সরঞ্জামে অগ্রগতি অর্জন করতে হবে। তিনি ধারাবাহিকভাবে মৌলিক গবেষণা জোরদার করার এবং এআই-এর জন্য একটি স্বাধীন, নিয়ন্ত্রণযোগ্য এবং সহযোগিতামূলকভাবে কার্যকর ভিত্তিগত সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার সিস্টেম তৈরির আহ্বান জানান।
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দৃষ্টান্তমূলক রূপান্তর এবং সকল ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি বাড়াতে শি জিনপিং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারকে কাজে লাগানোর গুরুত্ব উল্লেখ করেন। তিনি ঐতিহ্যবাহী শিল্পের রূপান্তর ও আপগ্রেডিং এবং কৌশলগত উদীয়মান শিল্প ও ভবিষ্যতের শিল্পের জন্য নতুন পথ উন্মুক্ত করার ক্ষেত্রে এআই-এর ভূমিকা তুলে ধরেন।
এআই-এর জন্য নীতিগত সহায়তার কথা উল্লেখ করে শি বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জন্য আর্থিক পরিষেবাগুলো এগিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এআই বিশ্বব্যাপী মানবতার কল্যাণে কাজ করতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চালানো, গ্লোবাল সাউথ দেশগুলোকে তাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা এবং বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিভেদ দূর করতে অবদান রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
শি আরও বলেন, সকল পক্ষের মধ্যে উন্নয়ন কৌশল, ব্যবস্থাপনার নিয়ম এবং প্রযুক্তিগত মানদণ্ডগুলোর সমন্বয় এবং সেই সমন্বয়কে উৎসাহিত করা উচিত। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যাপক ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে একটি বিশ্বব্যাপী ব্যবস্থাপনা এবং মানদণ্ড তৈরি করা উচিত বলে তিনি মত দেন।
সূত্র: চায়না ডেইলি
এসএএইচ