চারদিনের সংঘাতের পর যুদ্ধবিরতিতে গেছে ভারত ও পাকিস্তান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘দীর্ঘ আলোচনা’র পর এই যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়েছে—যেখানে যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও কয়েকটি দেশ মধ্যস্থতা করেছে।
এমন আবহে পাকিস্তান সেনাবাহিনী দাবি করেছে, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তারা নয়, ভারতই দিয়েছে।
ভারতের বিরুদ্ধে পরিচালিত ‘অপারেশন বুনিয়ানুল মারসুস’ অভিযানের বিস্তারিত তথ্য জানাতে রোববার (১১ মে) এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক (ডিজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘এটা রেকর্ডে রাখুন যে, পাকিস্তান কখনও যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেনি। ৬ এবং ৭ মে রাতে সেই কাপুরুষোচিত হামলার পর ভারতীয়রা অনুরোধ করেছিল এবং পাকিস্তান খুব স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল যে, আমরা এই কাজের প্রাপ্য প্রতিক্রিয়া দেওয়ার পরেই কেবল যোগাযোগ করব। ’
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় নয়াদিল্লি এ (যুদ্ধবিরতির) অনুরোধ জানায়। পাকিস্তান কোনো যুদ্ধবিরতির আবেদন করেনি, বরং ভারতই সংঘর্ষ কমাতে চেয়েছিল। আমরা আমাদের মিত্র ও মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়ে দিয়েছিলাম, উপযুক্ত জবাব না দিয়ে কোনো আলোচনায় আমরা অংশ নেব না।
প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে পাকিস্তান দায়িত্বশীলতা ও পরিপক্বতার সঙ্গে কাজ করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটি এমন এক সংঘাত ছিল, যা ১.৬ বিলিয়ন মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করতে পারত। দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে সংঘর্ষ হলে তা গোটা অঞ্চলের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। যারা যুদ্ধ চায়, তারা কেবল নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই তা করে। শান্তি দুই দেশের জন্যই মঙ্গলজনক। যুদ্ধের পেছনে যারা আছে, তাদের লক্ষ্য সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থ।
সংবাদসম্মেলনে কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থানের কথা জানান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী। (বিভিন্ন সংঘাতে) কাশ্মীরে হাজারো ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে এবং জোরপূর্বক জনমত পরিবর্তন ঘটানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ডিজি আইএসপিআর বলেন, কাশ্মীর একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃত বিরোধ এবং তা জাতিসংঘ সনদ ও কাশ্মীরিদের ইচ্ছার ভিত্তিতে সমাধান হতে হবে। ভারত একে অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করলেও এটি এখনও জাতিসংঘে বিবেচনাধীন একটি আন্তর্জাতিক বিরোধ। ভারতের একতরফা সাংবিধানিক পরিবর্তন ও দমন-পীড়ন পরিস্থিতির বাস্তবতা বদলাতে পারবে না।
এ সময় পাকিস্তানের হেফাজতে কোনো ভারতীয় পাইলট নেই এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো গুজব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলেও দাবি করেন জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী। বলেন, এগুলো সমস্তই ভুয়া খবর এবং প্রচারের অংশ যা একাধিক উৎস থেকে তৈরি করা হয়েছে।
সীমান্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে ডিজি আইএসপিআর বলেন, আমরা শান্তিপ্রিয় জাতি, তবে আগ্রাসনের জবাব দিতে জানি। আমরা জবাব দিয়েছি এবং ভবিষ্যতেও জাতির রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রস্তুত আছি। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘন করেনি। ৬ থেকে ৭ মে রাতে হামলায় শিশুসহ নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের শহীদ হওয়ার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী জাতির কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে।
সূত্র: দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন
এসএএইচ