ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২, ১৩ মে ২০২৫, ১৫ জিলকদ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

বিদেশ সফরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘প্রথম পছন্দ’ সৌদি আরব? 

আন্তজার্তিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:৫৮, মে ১৩, ২০২৫
বিদেশ সফরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘প্রথম পছন্দ’ সৌদি আরব? 

দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে এখন সৌদি আরবে। পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে উপলক্ষে ইতালি এবং ভ্যাটিকানে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতির পর তিনি দেশটিতে যান।

১৩ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত তিনি সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করবেন।

২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প ২৫টি দেশ সফর করেন। সেবার তিনি চারবার ফ্রান্সে যান। জাপান ও যুক্তরাজ্য তিনি তিনবার করে সফর করেন। বেলজিয়াম, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইজারল্যান্ড, ভিয়েতনাম সফরে যান দুইবার করে। এছাড়া আফগানিস্তান, আর্জেন্টিনা, কানাডা, চীন, ফিনল্যান্ড, ভারত, ইরাক, ইসরায়েল, উত্তর কোরিয়া, ফিলিস্তিন, ফিলিপাইন, পোল্যান্ড, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর এবং ভ্যাটিকান সিটিতে তিনি একবার করে যান।

প্রথম মার্কিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে ২০১৭ সালেও সৌদি আরব সফর করে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যকে তার প্রথম বিদেশ গন্তব্য হিসেবে বেছে নেন। তখন তিনি সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ এবং সেই সময়ের ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেন। দুই দেশের মধ্যে ১১০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়।

সৌদি আরব সফরের পর, ট্রাম্প ইসরায়েল সফর করেন। তখন তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে দেখা করেন। তিনিই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি তখন জেরুজালেমের পশ্চিম প্রাচীর পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি অধিকৃত পশ্চিম তীরের শহর বেথেলহ্যামে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

ট্রাম্পের এবারের সৌদি সফরটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক জটিল সংকট ও সমঝোতা প্রক্রিয়া একসাথে চলছে— গাজার যুদ্ধ, ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনার অনিশ্চয়তা, আরব-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব তো রয়েছেই।  

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও এই অঞ্চলে প্রক্সিদের সহায়তা বন্ধ নিয়ে আলোচনা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। একই সময় গাজার যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্য আলোচনাও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়াও লেবানন, সিরিয়া, ইরাক এবং ইয়েমেনে চলমান অস্থিরতাও এই সফরের প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব পাচ্ছে।

আটলান্টিক কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞ রাচা হালওয়া সম্প্রতি এক বিশ্লেষণে উল্লেখ করেছেন, এই সফর এবং এর সম্ভাব্য ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতিকে নতুনভাবে রূপ দিতে পারে। এই সফরের মূল অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা, পারমাণবিক শক্তি ও খনিজ সম্পদ সহযোগিতা।

এবারের সফরে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনকে শর্ত ছাড়াই সৌদি আরবের সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতার বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্প আলোচনায় প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে। একইভাবে প্রতিরক্ষা সহযোগিতাও থাকবে আলোচনায়।

এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো একটি ৯ বিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদ বিষয়ক সমঝোতা স্মারক, যা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি বুরখান ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট এবং সৌদি অংশীদারদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও শাহাল খান জানান, এই চুক্তির আওতায় সৌদি কোম্পানি ‘গ্রান্ড মাইন্স মিনিং’ সৌদি আরব ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে লিথিয়াম, কোবাল্ট এবং রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস খুঁজে বের করে উত্তোলন করবে, যা যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হবে। এই উপাদানগুলো উন্নত প্রযুক্তি, জ্বালানি এবং প্রতিরক্ষা খাতে ব্যবহৃত হবে।

সবমিলিয়ে, এই সফরের কর্মসূচি ও কূটনৈতিক প্রয়াস স্পষ্টভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের বৈদেশিক নীতির অগ্রাধিকার এবং মধ্যপ্রাচ্যকে ঘিরে তার কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করবে।

এমএইচডি/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।