ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

পুতিনের আস্থাভাজন কে এই মিশুস্তিন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২০
পুতিনের আস্থাভাজন কে এই মিশুস্তিন? ভ্লাদিমির পুতিন ও মিখাইল মিশুস্তিন

বুধবার সকালে রাশিয়ার যত মানুষ ঘুম থেকে জেগে উঠেছিল। তাদের প্রায় কেউই মিখাইল মিশুস্তিনের নামটাও জানত না। কিন্তু বিধির কি লীলা! সেই অজানা অচেনা মিশুস্তিনই হয়ে উঠলেন রুশ সরকারের প্রধান।

কিন্তু এভাবে কেউ কি রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেন? উত্তরটা ‘হ্যাঁ’ বলতে হবে। কারণ সে দেশের প্রেসিডেন্টের নাম ভ্লাদিমির পুতিন।

 

পুতিন জানেন এই টার্মের পর তিনি আর প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করতে পারবেন না। সংবিধান অনুযায়ী তাকে পদ ছেড়ে সরে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু পুতিন যে তা চান না! তিনি আরও অনেকদিন গদি আগলে রাখতে চান। সেই কারণে তার নির্দেশে মেদভেদেব সরকার গদি ছেড়ে দিল। নিজের পছন্দের লোককে তিনি প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে নিলেন। ঘোষণা দিলেন সংবিধান সংস্কারের। ধারণা করা হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্যই পুতিন সংবিধান সংস্কারে হাত দিচ্ছেন।

এই হঠাৎ প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসা কে এই মিখাইল মিশুস্তিন? গত বুধবার পর্যন্ত যার নামে উইকিপিডিয়ায় কোনো পাতাও ছিল না!

৫৩ বছর বয়সী মিশুস্তিন কোনো রাজনৈতিক নেতা নন। তিনি রাশিয়ার রাজস্ব বিভাগের প্রধান ছিলেন। সোজা কথায় সরকারের আমলা। আর তিনি ছিলেন পুতিনের খুব কাছের ‘আস্থাভাজন’ লোক।

মিখাইল ভ্লাদিমিরোভিচ মিশুস্তিনের জন্ম ১৯৬৬ সালে মস্কোতে। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি রাজস্ব আদায়ের কাজ করতেন আর ২০১০ সালে এই বিভাগেরই প্রধান হয়ে যান তিনি।  

২০০৮ সালে তিনি রাশিয়ান ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির প্রধান হিসেবেও কাজ করেন।

রাজস্ব বিভাগে কাজ করলেও মিশুস্তিন প্রাথমিকভাবে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ট্রেনিং নেন। ১৯৮৯ সালে গ্রাজুয়েট ডিগ্রি লাভ করেন মস্কোর স্টানকিন মেশিন-ইনস্ট্রুমেন্ট ইনস্টিটিউট থেকে। অন্যদিকে তার অফিসিয়াল বায়োগ্রাফিতে দেখা গেছে, তিনি অর্থনীতিতে পিএইচডি করেছেন।  

তিনি নাকি আবারও তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞও। নব্বইয়ের দশকে জড়িত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল কম্পিউটার ক্লাবে। পশ্চিমা বিশ্বের তথ্য-প্রযুক্তির জ্ঞান রাশিয়ার ছড়িয়ে দিতে কাজ করেছেন।   

বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মেদভেদেবের মতো মিশুস্তিনও প্রযুক্তিপ্রেমী একজন মানুষ। রাশিয়ার বাজস্ব আদায় ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজেশন করার কৃতিত্ব তারই।

মিশুস্তিন গত বছর কোম্মারসান্ত পত্রিকাকে বলেছিলেন, রাশিয়ার উচিত এখনই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিজিটাল প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা।

পুতিনের মতো নতুন প্রধানমন্ত্রীও একজন হকিপ্রেমী। একইসঙ্গে রাশিয়ার আইস হকি ফেডারেশনের বোর্ড সদস্য।  

সরকারি চাকরি করলেও তার বেতন ছিল চোখ কপালে ওঠার মতো।  

রয়টার্স জানাচ্ছে, ২০১৫ সালে ফোর্বসের করা সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া সরকারি কর্মচারীর তালিকায় তার অবস্থান ছিল ৫৪ নম্বরে। তার আয় প্রায় ২৫ কোটি টাকা। তার স্ত্রীর আয়ও সাড়ে ৬ কোটি টাকা।  

তবে মিশুস্তিনকে ভালোভাবে নেয়নি রাশিয়ার সাধারণ মানুষ। তাদের কাছে এই ভদ্রলোক একজন আমলা ছাড়া আর কিছুই নয়। বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক নেতারাও এ নিয়ে শুরু করেছেন সমালোচনা।  

সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা গেন্নাদি গুদকভ প্রধানমন্ত্রী মিশুস্তিনকে ‘পরিচয়হীন লক্ষ্যহীন এক নির্বাহী‘ বলে উল্লেখ করেন।  

কার্নেগি মস্কো কেন্দ্রের নিরপেক্ষ পণ্ডিত তাতিয়ানা স্তানোভায়া মিশুস্তিনকে ‘টেকনোক্র্যাটিক পদধারী’ বলে ব্যঙ্গ করে বলেন, তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা বা জনপ্রিয়তা কোনোটাই নেই।

মিশুস্তিনকে একজন দুর্দান্ত আমলা ছাড়া আর কিছু ভাবতে চান না পুতিনের সাবেক উপদেষ্টা বিশ্লেষক গ্লেব পাভলভস্কি।

আরও পড়ুন> ‘অনভিজ্ঞ’ মিখাইল মিশুস্তিন রাশিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী


বাংলাদেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২০
এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।