অনলাইনে শিশুদের হেনস্তাকারী ও যৌন নির্যাতনকারীদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বব্যাপী শিশু সুরক্ষা সংগঠনের নেতারা। তারা বলেছেন, বর্তমান আইনি ব্যবস্থা ডিজিটাল স্পেসে শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ পরিপূর্ণভাবে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
দুবাইয়ে ওয়ার্ল্ড পুলিশ সামিটে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর প্রিভেনশন অব চাইল্ড অ্যাবিউজ অ্যান্ড নেগলেট (আইএসপিসিএএন)-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রগতি তুম্মালা বলেন, সরকারগুলোকে অবশ্যই শিশুদের বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধ দমনে কঠোর শাস্তির বিধান করতে হবে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে কয়েক ধরনের শিশু নির্যাতনের সর্বোচ্চ শাস্তি মাত্র সাত বছর। এটা একেবারেই যথেষ্ট নয়। কঠোর শাস্তির বিধান থাকলে অনলাইনে কেউ শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ করার আগে দুবার ভাবতে বাধ্য হবে।
তিনি অনলাইনে শিশু যৌন নির্যাতনের উপাদানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের ধীর গতি সম্পর্কেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, অনলাইনে শিশুদের হেনস্তা বা যৌন নির্যাতনের জন্য ফেডারেল জরিমানা পরিবর্তিত হয়। তবে মামলার ওপর নির্ভর করে তা ৫ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে। এই শাস্তির বিধান থাকলেও বিশেষজ্ঞরা যুক্তি দেখান, ডিজিটাল মাধ্যমের অপব্যবহার কার্যকরভাবে ট্র্যাক করা এবং মামলা করা কঠিন হয়ে পড়ে, বিশেষত যখন প্ল্যাটফর্মগুলোর সহযোগিতা ধীর গতিতে হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০১৬ সালের ফেডারেল আইন নং ৩ (ওয়াদিমার আইন) এর অধীনে, অনলাইনে শিশু নির্যাতনের জন্য শাস্তি সবচেয়ে কঠোর, সেখানে এক মিলিয়ন দিরহাম পর্যন্ত জরিমানার বিধান আছে।
ইন্টারন্যাশনাল পুলিশিং অ্যান্ড পাবলিক প্রোটেকশন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান সাইমন বেইলি সিবিই কিউপিএম অনলাইন হুমকির ক্রমবর্ধমান প্রকৃতি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘শিশুরা এখন আর তাদের শারীরিক এবং অনলাইন জীবনের মধ্যে পার্থক্য করে না। তাদের সঙ্গে আমাদের কথা বলতে হবে, অনলাইনে তাদের অভিজ্ঞতা শুনতে হবে এবং সুরক্ষা নীতি গঠনে তাদের জড়িত করতে হবে। ’
প্রোটেক্ট চিলড্রেনের নির্বাহী পরিচালক এবং ইন্টারপোলের অপরাধী ব্যবস্থাপনা উপ-গ্রুপের চেয়ারম্যান নিনা ভারানেন-ভালকোন অনলাইন পরিবেশকে জনসাধারণের রাস্তার সঙ্গে তুলনা করে বলেন, আমরা বাচ্চাদের ট্র্যাফিক সুরক্ষা শেখাই। আমরা তাদের একা মহাসড়ক পার হতে দিই না। কিন্তু যখন ইন্টারনেটের কথা আসে, তখন আমরা নিয়ম ছাড়াই তাদের হাতে ডিভাইস তুলে দিই। অনলাইন জগৎ একটি সামাজিক পরিবেশ, শুধু একটি যন্ত্র নয়। শিশুদের ডিজিটাল টুল ব্যবহারের আগেই অনলাইন নিরাপত্তা বিষয়ক শিক্ষা শুরু করা উচিত।
ইউনাইটেড নেশনস ইনস্টিটিউট ফর ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চের (ইউএনআইটিএআর) ড. এলোডি ট্রাঞ্চেজ উল্লেখ করেন, অসস্বচ্ছল পরিবারের শিশুরা অতিরিক্ত ঝুঁকির মুখোমুখি হয়, বিশেষ করে ডিজিটাল শিক্ষার অভাবে। সামাজিক বা অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট নির্বিশেষে সব শিশুর জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা সরঞ্জামে সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।