ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নতুন প্রজন্মকে সাংবাদিক আনিস-সুভাষকে অনুকরণের আহ্বান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৩
নতুন প্রজন্মকে সাংবাদিক আনিস-সুভাষকে অনুকরণের আহ্বান

ঢাকা: দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে সাংবাদিকতায় অবিস্মরণীয় আনিসুর রহিম ও সুভাষ চৌধুরী বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।  
তিনি বলেন, দুইজনই তৃণমূল সাংবাদিকতায় থেকেও জাতীয় পর্যায়ে স্থান করে নেওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

সমাজ প্রকৌশলী হিসেবে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি তাদেরকে অনুসরণের জন্য নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

শনিবার (১৮ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ মিলনায়তনেন‘অনন্য আনিস ও সুবাসিত সুভাষ’ শীর্ষক স্মরণানুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ মন্তব্য করেন।  
সাংবাদিক আনিসুর রহিম ও সুভাষ চৌধুরীর সুহৃদদের পক্ষ থেকে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত। সাংবাদিক নিখিল চন্দ্র ভদ্রের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)’র সভাপতি ওমর ফারুক ও কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল, প্রয়াত আনিসুর রহিমের স্ত্রী অধ্যক্ষ ড. দিলারা বেগম, প্রয়াত সুভাষ চৌধুরীর স্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মিনতি চৌধুরী, সংস্কৃতি কর্মী পুলক রাহা, একাত্তর টিভির ভারপ্রাপ্ত প্রধান বার্তা সম্পাদক পলাশ আহসান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)'র ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাকিলা পারভীন, স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল, স্বদেশ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত, পত্রদূত সম্পাদক লায়লা পারভীন সেজুতি ও সাতক্ষীরার সাংবাদিক শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন।

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মফস্বল সাংবাদিকদের জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতির জন্য শুভ সূচনা হলো। কারণ সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে সাংবাদিকতাকে সমৃদ্ধ করার জন্য আনিসুর রহিম ও সুভাষ চৌধুরীর অবদান অবিস্মরণীয়। বিশেষ করে উপকূলীয় সাংবাদিকতায় তারা ছিলেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তাদের নিয়ে এ আয়োজন।

তিনি আরও বলেন,  প্রান্তিক জনগোষ্ঠির সমস্যা-সংকটকে জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন সাংবাদিকরা। সাতক্ষীরার সাংবাদিক অধ্যাপক আনিসুর রহিম ও সুভাষ চৌধুরী সেই ভূমিকা রেখেছেন। তাদের কাছ থেকে নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের শিক্ষা নিতে হবে। অবহেলিত প্রত্যন্ত জনপদে উন্নয়নের ছোঁয়া পৌছে দিতে সাংবাদিকদের লেখনি জোরদার করতে হবে।

সাংবাদিক নেতা ওমর ফারুক বলেন, সাংবাদিকতা চ্যালেঞ্জিং পেশা। এ পেশায় কোনো দল নেই। জাতীয় পত্রিকা বলে কিছু নেই। জাতীয় সাংবাদিক বলে কিছু নেই। কেননা ‘সাংবাদিকতায় জাতীয়তা’ বলে কিছু নেই। সাতক্ষীরা উপকূলীয় জেলা হলেও এ অঞ্চলের অনেক ইস্যু আন্তর্জাতিক। এখানে সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ সারাদেশকে নাড়া দেয়। স্থানীয় সাংবাদিকরাই সেই রিপোর্ট করে থাকেন। সাংবাদিক আনিসুর রহিম ও সুভাষ চৌধুরীও সেটাই করেছেন। তাদের সততা নীতি ও আদর্শ আমাদের সবার জন্য অনুকরণীয়। তারা নীতি ও আদর্শ থেকে শিক্ষা নিয়ে তা নিজেদের মধ্যে প্রকাশ ঘটাতে হবে। আগামী নির্বাচনেকে সামনে রেখে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, আগামীতে সাম্প্রদায়িক শক্তি ক্ষমতায় আসলে সাতক্ষীরা কেন, সারাদেশেই টিকে থাকা কঠিন হবে।

সভাপতির বক্তব্যে শ্যামল দত্ত বলেন, প্রায়ত এই দুই বন্ধু সাতক্ষীরায় আধুনিক সাংবাদিকতার নবধারা সৃষ্টি করেছিলেন। তারা ছিলেন সৃজনশীল ব্যক্তি, নিরহংকার ও নির্লোভ মানুষ ও সমাজ সংস্কারক। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। তারা সাংবাদিক পরিচয়ের বাইরেও শিক্ষাবিদ, শিশু সংগঠক, কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষ ও নাগরিক সমাজের নেতা হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছেন। সমাজকে আলোকিত করতে বিশেষ অবদানের জন্য রাষ্ট্র তাদেরকে স্বীকৃতি দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
স্মরণসভার শুরুতে আনিসুর রহিম ও সুভাষ চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে দুজনের ওপর নির্মিত একটি প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে 'সুবাসিত সুভাষ ও অনন্য আনিস' দুইটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।  

বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আনিসুর রহিম গত ৩ জানুয়ারি স্বজনদের সঙ্গে সুন্দরবন ভ্রমণকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দৈনিক সাতক্ষীরা চিত্রের সম্পাদক ও সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। সাহসী সাংবাকিতার কারণে কয়েকবার হামলার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং ভূমিহীন ও নাগরিক আন্দোলনে আজীবন সক্রিয় ছিলেন তিনি।

সাতক্ষীরার ডায়েরিখ্যাত সুভাষ চৌধুরী ৩৬ বছর ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে তিনি যেমন জনপ্রিয় ছিলেন, তেমনি সাংবাদিকতায় ছিলেন পথিকৃৎ। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দৈনিক যুগান্তর ও এনটিভির সাতক্ষীরা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। সাংবাদিকতার কারণে ১৯৮৮ সালে কারাভোগ করেন সুভাষ চৌধুরী। সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২২ সালের বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডসহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৩
টিএ/এমএমজেড/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।