ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জিআই স্বীকৃতি পেল চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আম

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০২৩
জিআই স্বীকৃতি পেল চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আম

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) হিসেবে স্বীকৃতি পেল চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আমসহ চারটি পণ্য।  

শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান প্যাটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের (ডিপিডিটি) ২৫ জুনের সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

জিআই স্বীকৃতি পাওয়া অন্য পণ্যগুলো হলো- শেরপুরের তুলসীমালা ধান এবং বগুড়ার দই। এর আগে ক্ষীরশাপাত এবং রাজশাহীর সঙ্গে যৌথভাবে ফজলি আম স্বীকৃতি পেয়েছে। এ নিয়ে দেশের ১৫টি পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেল।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান প্যাটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের (ডিপিডিটি) ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের আবেদন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই শেষে ২৫ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আমসহ ৪টি পণ্যকে জিআই পণ্য হিসেবে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং ওইদিনই আম ২টির পক্ষে জিআই সনদ ইস্যু করা হয়। অনুমোদন পাওয়া এসব পণ্যের পক্ষে আবেদনকারীদের ডেকে দ্রুত সনদ বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ডিপিডিটিতে ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আমকে জিআই পণ্য করার জন্য আবেদন করে আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের পক্ষে মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। আবেদনের প্রায় সাড়ে চার বছর পর ফল ২টির জিআই সনদ প্রাপ্তির জন্য গত ২২ জুন পণ্য দুটির বিপরীতে ৬ হাজার টাকা ব্যাংক ড্রাফট করা হয়।

এ ব্যাপারে আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান জানান, সদ্য স্বীকৃতি পাওয়া ২টি জাতের আমসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৪টি জাতের আম স্বীকৃতি পাওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর পাশাপাশি আমরাও আনন্দিত। ‘যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ ব্যক্তিগত উদ্যোগে পাঠানো আমের স্বাদ পেলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য হিসেবে এখন থেকে স্বীকৃতি পাবে। জিআই পণ্যের মর্যাদা পাওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে রপ্তানির সুযোগও তৈরি হলো। এতে করে একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে, অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষিরা আমের ন্যায্যমূল্য পাবে। তবে এ ক্ষেত্রে জিআই ট্যাগ পণ্যের গায়ে যেন দ্রুত লাগানো যায় তার ব্যবস্থাও করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, জিআই সনদ পাওয়া ৪টি জাতের আম দ্রুত আরও বেশি পরিসরে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেবে এ গবেষণা কেন্দ্র।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ফজলি আমের জিআই সনদ দাবির পক্ষে আবেদনকারী মুনজের আলম মানিক জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের বিদেশের পাশাপাশি দেশজুড়েও সুনাম রয়েছে। স্বাদ, গন্ধ ও সব মিলিয়ে এ জেলার আমের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণেই ৪ জাতের আমের জিআই সনদ মেলায় আমরা গর্বিত। তবে ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি খিরসাপাত আম এবং গত বছরের ২২ মার্চ যৌথভাবে ফজলি আম জিআই সনদ পাওয়ায় পরও জিআই ট্যাগ থেকে বঞ্চিত আমচাষিরা। নতুন করে আরও ২টি জাতের আম জিআই স্বীকৃতি পেল। তাই দ্রুত এই ৪ জাতের আমে ট্যাগ লাগানোর ব্যবস্থা হলে আমের গুরুত্ব আন্তর্জাতিকভাবে যেমন বাড়বে, কৃষকও তেমনি লাভবান হবে। সেইসঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী আদি চমচম, দম মিষ্টিসহ ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলোও স্বীকৃতির জন্য আবেদন করতে হবে।

আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ববিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল প্রপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে ডিপিডিটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে। ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন হয়। ২০১৫ সালে আইনের বিধিমালা তৈরির পর জিআই পণ্যের নিবন্ধন নিতে আহ্বান জানায় ডিপিডিটি। এর পর বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জিআই পণ্য হিসেবে ২০১৬ সালে স্বীকৃতি পায় জামদানি। এর পর একে একে স্বীকৃতি পেয়েছে ইলিশ, ক্ষীরসাপাত আম, মসলিন, বাগদা চিংড়ি, কালিজিরা চাল, বিজয়পুরের সাদা মাটি, রাজশাহী সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম। নতুন করে এ তালিকায় যুক্ত হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২ জাতের আমসহ চার পণ্য। এখন থেকে পণ্যগুলো বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পাবে।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ৯৫টি পণ্যের তালিকা পাঠানো হয় শিল্প মন্ত্রণালয়ে। জিআই পণ্য হিসেবে নির্বাচনে সেগুলো আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব সংস্থার (ডব্লিউআইপিও) সব শর্ত পূরণ করে কিনা, তা যাচাইয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এতদিনে মাত্র ১৫টি পণ্যের জিআই স্বীকৃতি অর্জিত হলো। অথচ প্রতিবেশী ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়াধীন কন্ট্রোলার জেনারেল অব প্যাটেন্টস, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেডমার্ক জানাচ্ছে, দেশটির জিআই স্বীকৃত পণ্য ৩৭০টির বেশি। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করায় ভারতের কাছে নকশিকাঁথার মতো পণ্যের অধিকার হারিয়েছে বাংলাদেশ।

ডিপিডিটি সূত্র জানায়, অন্তত ২৪টি পণ্যের জিআই স্বীকৃতির আবেদন প্রক্রিয়াধীন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নাটোরের কাঁচাগোল্লা, বাংলাদেশ ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, রংপুরের হাঁড়িভাঙা আম, কুষ্টিয়ার তিলেখাজা, কুমিল্লার রসমালাই, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ীর চমচম, নোয়াখালীর মহিষের দুধের দই, লতিরাজ কচু, সোনালি মুরগি, সাবিত্রী রসকদম, চাচুরি বিলের কৈ মাছ, নাক ফজলি আম, সুন্দরবনের মধু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি, জামালপুরের নকশিকাঁথা, ফুটি কার্পাস তুলা প্রভৃতি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।