ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শেখানো বুলি আওড়ায় মানবাধিকার সংস্থাগুলো: শেখ হাসিনা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২৩
শেখানো বুলি আওড়ায় মানবাধিকার সংস্থাগুলো: শেখ হাসিনা আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা

ঢাকা: দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের হোতা জিয়া, খালেদা, তারেক ও জামায়াতের যুদ্ধাপরাধীরা। এমনটি বলেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

আন্তর্জাতিক সংস্থা যারা এখানকার মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তা ওই মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের শেখানো বুলি, এমন অভিযোগ করেছেন তিনি।  

সোমবার (২১ আগস্ট) ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় শহীদদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এ অভিযোগ করেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজ তারা ভোটের অধিকারের কথা বলে, আর কিছু আছে তাদের ভাড়া করা, তারা মানবাধিকারের কথা বলে। যারা বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্নে তোলে, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, আমরা যারা আপনজন হারিয়েছি, আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী তাদের আপনজন হারিয়েছে বিএনপি জামায়াতের কাছে, তাদের মানবাধিকার কোথায়? আমরা বিচার পাইনি। আমরা কেন বিচার বঞ্চিত ছিলাম।  

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা দেখি বাংলাদেশের মানবাধিকারের কথা বলে। তাদের শেখানো বুলি যারা বলে, দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বারবার হয়েছে, যার হোতা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক জিয়াসহ জামায়াতের যুদ্ধাপরাধীরা। তারা এখনো তা করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে মানবাধিকার সংরক্ষণ হয়েছে। মানুষ ন্যায়বিচার পায়। কেউ অপরাধ করলে তার বিচার আমরা করি। কিন্তু আমরা তো বিচার পাইনি। কেন ৩৩ বছর সময় লেগেছে বিচার পেতে? কী অপরাধ করেছিলাম যে, আমরা বিচার পাইনি? বিচারের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।  

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনার সময়কার মর্মান্তিক পরিস্থিতি বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে র‌্যালি করছিলাম। আর সেখানেই প্রকাশ্য দিবালোকে হাজার হাজার মানুষের মধ্যে গ্রেনেড হামলা হয়। যে গ্রেনেড ব্যবহার হয় রণক্ষেত্রে, ছোড়া হয় যুদ্ধের সময়, তা এখানে ছোড়া হলো। যখন আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছি, মানুষের নিরাপত্তার জন্য, তখন ১৩টি গ্রেনেড হামলা হলো। আর কতগুলো যে ওদের হাতে ছিল কে জানে!  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বক্তৃতা শেষ করেছি, ফটোগ্রাফাররা আমাকে ছবি তোলার জন্য একটু দাঁড়াতে বলেন। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গেল গ্রেনেড হামলা। হানিফ ভাই আমাকে টেনে নিচে বসিয়ে দিলেন। আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরা হলো। গ্রেনেড ট্রাকের ওপর না পড়ে ট্রাকের ডালার সঙ্গে লেগে নিচে পড়ে। সমস্ত স্প্লিন্টার হানিফ ভাইয়ের মাথায়। তার সমস্ত গা বেয়ে রক্ত আমার কাপড়ে এসে পড়ছে। প্রথমে তিনটি গ্রেনেড, তারপর একটু বিরতির পর আবার একটার পর আরেকটা গ্রেনেড মারা হলো। আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মী সেখানে উপস্থিত। ঘটনায় ২২ জন মৃত্যুবরণ করেন। হাজারের কাছাকাছি নেতাকর্মী আহত হন। এর মধ্যে ৫০০ জনের বেশি গুরুতর আহত হন।

তিনি বলেন, সেখানে এমন একটি পরিবেশ,  কেউ উদ্ধার করতে আসতে পারেনি। যারা উদ্ধার করতে এসেছিল, তাদের ওপর টিয়ারগ্যাস ও লাঠিচার্জ করা হয়। আমার প্রশ্ন কেন এই টিয়ারগ্যাস ও লাঠিচার্জ? এখানে অনেক আহত নেতারাই বসে আছেন, এখনো যাদের শরীরে সেই স্প্লিন্টার রয়ে গেছে। সেই যন্ত্রণা নিয়ে তাদের বেঁচে থাকতে হচ্ছে। আমাদের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের শরীরও ঝাঁঝরা। এখানে অনেকেই আছেন, কত নাম বলব, সবাই আহত। সাংবাদিকও আহত হন। এ ধরনের ঘটনা একটি রাজনৈতিক দলের ওপর হতে পারে, তা কল্পনাও করা যায় না। কোনোদিন এ ধরনের ঘটনা দেখা যায়নি। আমি বেঁচে গিয়েছিলাম, যখন ফিরি, আমার সারা শরীরে রক্ত। রেহানা (শেখ রেহানা) দেখে সে স্তম্ভিত হয়ে যায়। আমি বলি, আমার কিছু হয়নি। আমি তো চলে এসেছি, কিন্তু ওখানে কী অবস্থা, আমি কিছু জানি না। লাশের ওপর লাশ পড়ে আছে।

দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা আমাদের নেতাকর্মীদের তো হামলা করেছে, সাধারণ মানুষও তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। ঘাতক-ঘাতকই। ওরা তো জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। ওরা তো জনগণকে হত্যা করেছে। বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছে। পেট্রোল ঢেলে আগুন দিচ্ছে। হাত-পা ধরে কান্নাকাটি করলেও ছাড়ে না। এটাই তো বিএনপির আসল চেহারা। এটিই বিএনপির চরিত্র। এর নেতৃত্ব খালেদা জিয়া-তারেক জিয়া তারাই তো দিচ্ছে। তারা ক্ষমতায় থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করছে। মানুষকে কী দিয়েছে? মানুষ তো ক্ষুধার্ত ছিল।  

তিনি বলেন, সজাগ থাকতে হবে, ওই খুনিদের হাতে যেন এদেশের মানুষ আর নিগৃহীত হতে না পারে, অগ্নিসন্ত্রাস আর জুলমবাজি করে এদেশের মানুষকে হত্যা করতে না পারে, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, খুনি, দুষ্কৃতকারী, অস্ত্র চোরাকারবারী, ঘুষখোররা যেন মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। ওই খুনিদের প্রতি ঘৃণা জনগণের। সবাই নিরাপদ থাকুন, ভালো থাকুন। যতক্ষণ বেঁচে আছি, দেশের মানুষের সেবা করে উন্নত জীবন দিয়ে যাব। মর্যাদা নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২৩
এসকে/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।