ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ত্রাণের টিন বুঝিয়ে দিয়ে ঢাকায় ফেরা হলো না মিলনের!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২৪
ত্রাণের টিন বুঝিয়ে দিয়ে ঢাকায় ফেরা হলো না মিলনের!

ফরিদপুর: ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের ছত্রকান্দা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা তারা মিয়ার সন্তান রাকিবুল ইসলাম মিলন (৪০) চাকরি করতেন ঢাকায় সচিবালয়ে লিফটম্যান হিসেবে।

সচিবালয়ে চাকরির সুবাদে পরিচিতদের মাধ্যমে সম্প্রতি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি পরিবারের জন্য তদবির করে ত্রাণ হিসেবে কয়েক বান্ডিল টিন সহায়তার বরাদ্দ আনেন।

এরপর সকালে একটি পিকআপভ্যানে করে নিজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আশেপাশের গ্রামের কয়েকজনকে নিয়ে সেই টিন আনতে যাচ্ছিলেন ফরিদপুরের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার কার্যালয়ে।

কিন্তু পথিমধ্যে বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মিলনের স্ত্রী সুমি বেগম (৩৩) ও দুই সন্তান আবু রায়হান (৬), আবু সিনান রুহানসহ (৫) ১৩ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন মিলনের মা খুড়িয়া বেগম। এ দুর্ঘটনায় মর্জিনা বেগম (৭০) নামে মিলনের নানি শাশুড়িরও মৃত্যু হয়েছে। মর্জিনা বেগম একই গ্রামের ওহাব মোল্লার স্ত্রী।  

এই হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনার খবরে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিয়ে আসা হলে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।  

রাকিবুল ইসলাম মিলনের মামাতো ভাই নুরুজ্জামান খসরু বলেন, ঢাকা থেকে কয়েকটি দরিদ্র পরিবারের জন্য ত্রাণের টিনের ব্যবস্থা করে সোমবার বিকেলে বাড়িতে আসে মিলন। সকালে ফরিদপুর রওনা হয়। তার আগে গতরাতে সর্বশেষ কথা হয়েছিল তার সঙ্গে। বলেছিলেন, ত্রাণের টিনগুলো বুঝিয়ে দিয়ে ওই পথেই চলে যাবে ঢাকা। কিন্তু এটিই যে তার শেষ যাওয়া সেটি কি কেউ জানতো।

তিনি আরও বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা তারা মিয়ার তিন ছেলের মধ্যে রাকিবুল ইসলাম মিলন মেজ ছিলেন। তার বড় ভাই ফরিদুল ইসলাম একজন স্কুলশিক্ষক। আর ছোট ভাই হাবিবুর রহমান মাস্টার্স পাশ করে আলফাডাঙ্গা সদরে ফোন ফ্লেক্সির দোকান করেন।

নিহত মিলনের ফুফাতো ভাই মকিবুল ইসলাম পিকআপে যাত্রী চলাচলের ঝুঁকির বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, এভাবে সবার সামনে পিকআপভ্যানে করে পনেরো বিশজন মানুষ যাত্রা করলো অথচ কেউ কিছু বললো না! সড়কপথে এভাবে যাত্রী চলাচল নিষিদ্ধ হলেও কেউ সে আইন মানে না। যাদের দেখভাল করার কথা তারাও কিছু বলে না।

ফরিদপুরের করিমপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, যাত্রীবাহী বাসটি ঢাকা থেকে মাগুরার উদ্দেশে যাচ্ছিল। এ সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই ১১ জনের মৃত্যু হয়। পরে আহত সাত জনকে উদ্ধার করে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে একজন ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা যান। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা পক্রিয়াধীন।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম এ ব্যাপারে যাত্রীদেরই সচেতন হওয়ার উপরে জোর বলেন, যেই পিকআপভ্যানে তারা যাচ্ছিলেন হয়ত তার চালকের কোনো লাইসেন্সই ছিল না। এজন্য যখন কেউ কোনো পরিবহনে উঠবেন, নিজের দায়িত্বশীলতা থেকেই জেনে নিবেন, গাড়িটি উপযোগী কিনা কিংবা চালকের বৈধতা আছে কিনা।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একইসঙ্গে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা এবং আহতদের প্রত্যেককে তিন লাখ টাকা করে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুরের কানাইপুরের দিগনগর এলাকায় বাস-পিকআপভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৩ জন নিহত হন।

আরও পড়ুন:
ফরিদপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষ, মৃত্যু বেড়ে ১৩
ফরিদপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ১৩ জনের পরিচয় মিলেছে

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।