ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ইলিশ কিনতে পদ্মার পাড়ে ক্রেতাদের ভিড়

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৪
নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ইলিশ কিনতে পদ্মার পাড়ে ক্রেতাদের ভিড়

মাদারীপুর: সরকারিভাবে ইলিশ শিকার, সংরক্ষণ, বিপণন, ক্রয় করা নিষিদ্ধ থাকলেও মাদারীপুর জেলার শিবচরের পদ্মা পাড়ের চিত্র একটু ভিন্ন। নদী থেকে সদ্য ধরে আনা তাজা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে নদীর পাড়েই।

আর তা কিনতে দুর্গম চরাঞ্চলে ছুটে আসছেন সাধারণ ক্রেতারা!। অনেকটা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন নিষিদ্ধ মৌসুমে গড়ে উঠা অস্থায়ী ইলিশের হাটে।  

শিবচরের পদ্মানদী বেষ্টিত বন্দরখোলা, কাঁঠালবাড়ী, চরজানাজাত ইউনিয়নের পদ্মাপাড়ে এভাবেই বিক্রি হচ্ছে ইলিশ মাছ। এদিকে গোপনে গড়ে উঠা এসব অস্থায়ী ইলিশের হাট দ্রুত গুড়িয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পদ্মার পাড়েই মাছের হাট বসে। পদ্মা নদীর ৪/৫টি স্থানে প্রতিদিন ভোর এবং বিকেলে বিক্রি হয় ইলিশ মাছ। দূরদূরান্ত থেকে শত শত মানুষ কিছুটা সস্তায় তাজা ইলিশ কিনতে ছুটে আসেন পদ্মা পাড়ে।

মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, মা ইলিশ রক্ষায় পদ্মা নদীতে উপজেলা মৎস্য অফিস, প্রশাসন, নৌপুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে। সময় ভাগ করে একাধিক টিম পদ্মায় অভিযান পরিচালনা করছেন। জেলে আটকসহ জব্দ করা হচ্ছে লাখ লাখ মিটার কারেন্ট জাল। গত ৬ দিনে পদ্মা নদীতে অভিযান চালিয়ে উপজেলা মৎস্য অফিস ও নৌপুলিশ কমপক্ষে ৫ লক্ষাধিক মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে ধ্বংস করেছে। এছাড়াও ট্রলার জব্দ, জেলে আটক, জরিমানা এবং মা মাছ উদ্ধারও হচ্ছে।  

তবে নদীতে অভিযান চলমান থাকলেও পদ্মার পাড়ে বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরও বসেছে ইলিশের হাট! একশ্রেণির অসাধু জেলেরা মাছ ধরে এনে নদীর পাড়ে বিক্রি করছেন। মাছ বিক্রির খবর পেয়ে ব্যাগ নিয়ে নারী-পুরুষেরা ছুটছেন পদ্মার পাড়ে।  

শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাংলাবাজার-চরজানাজাত নদীর পাড়ে ইলিশের হাট বসেছে। নদীর পাড়ে একের পর এক ট্রলার এসে ভিড়ছে। ট্রলারে বসেই বিক্রি করছেন জেলেরা। নদীর পাড়েও মাছ নিয়ে সারিবদ্ধভাবে বসেছেন বিক্রেতারা। দরদাম করে মাছ কিনছেন সাধারণ মানুষ। দাম কিছুটা কম। আকার ভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি থেকে শুরু মাছের দাম। বড় মাছগুলোর বেশিরভাগই ডিমে পূর্ণ! দূরদূরান্ত থেকে সাধারণ মানুষ আসছেন মাছ কিনতে। দাম কম হওয়ায় বেশি পরিমাণ মাছ কিনছেন একেকজন। এক কেজি পরিমাণ মাছ নদীর পাড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২০০/১৩০০ টাকায়! দরদাম করে ক্রেতারা সুবিধা মতো মাছ কিনতে পারছেন এখানে। এছাড়াও বন্দরখোলা ইউনিয়নের কাজিরসুরা পদ্মার পাড়েও জমজমাট ইলিশের হাট। শুরু থেকেই এখানকার নদীর পাড়ে দেদারসে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।

স্থানীয়রা বলেন, রাতে ধরা মাছগুলো ভোর থেকে বিক্রি হয়। ফজরের আযানের পরপরই মানুষের সমাগম বাড়তে থাকে এসব হাটে। সকাল ৮/৯ টার মধ্যে সকালের হাট ভেঙে যায়। এরপর দিনে যে মাছ ধরা হয় তা নিয়ে আছরের পর বেচা-কেনা শুরু হয়। চলে রাত ৮/৯ টা পর্যন্ত। এছাড়াও পদ্মানদীর বিভিন্ন চর এলাকায় রাতেও মাছ পাওয়া যায়। তবে অভিযানের কারণে চরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে মাছ বিক্রি করেন জেলেরা।

ভাঙ্গা থেকে মাছ কিনতে আসা মো. রিপন নামে এক যুবক বলেন, নদীর পাড়ে এখন একদম তাজা ইলিশ পাওয়া যায়। বাড়ির আশেপাশের অনেকেই মাছ কিনে আনছেন। এজন্য কিনতে এসেছি। বাজারের তুলনায় দাম খুব একটা কম নয়।

মাছ বিক্রি করেন এমন একাধিক বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, মাছ না ধরলে খাবো কী? তাছাড়া আমরা বন্ধ রাখলেও তো সবাই বন্ধ রাখে না। মাছ ঠিকই ধরে। এই সময়ে নতুন জেলেদের আগমন ঘটে। তারা মাছ ধরবেই। আমরা কেন বসে থাকবো? পদ্মা বিভিন্ন এলাকা থেকে মাছ ধরা হয়। বিশেষ করে মধ্যরাতে ফেলা জালে মাছ বেশি ধরা পড়ে।

তারা আরও জানায়, মাছ বাজারে নিয়ে বিক্রির সুযোগ নেই। এ কারণে নদীর পাড়েই বিক্রি হয়। ভোরে এবং বিকেল থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত মাছ বিক্রি হয়। দাম একটু কমই এখন।

এলাকাবাসী জানায়, চরে আসা-যাওয়ার পথে পুলিশের চেকপোস্ট বসালে ক্রেতারা মাছ কিনতে যেতে পারতো না। শিবচরের মূল ভূখণ্ড থেকে চর এলাকায় যেতে নির্দিষ্ট দুই/একটি পথই আছে। মাছ বিক্রির হাটে অভিযানসহ প্রবেশ পথেও নজরদারি থাকলে মাছ বিক্রি কমে যাবে। এতে ইলিশ ধরাও কিছুটা কমবে।

মো. সারোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, নদীতে অভিযান চললেও পদ্মার চর এলাকায় গড়ে উঠা এসব হাটে দ্রুত অভিযান চালানো উচিত। হাটগুলো বন্ধ করা উচিত। চর এলাকা কিছুটা দুর্গম হলেও সাধারণ ক্রেতারা পায়ে দীর্ঘপথ হেঁটে নদীর পাড়ে গিয়ে মাছ কিনছেন। জেলেরাও প্রকাশ্যে বিক্রি করছেন।

শিবচরের চরজানাজাত নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, পদ্মার পাড়ে মাছের হাট নিয়ে ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। খুব শীঘ্রই অভিযান চালানো হবে।

শিবচর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ফেরদৌস ইবনে রহিম বলেন, আমরা যৌথ অভিযান পরিচালনা করবো হাটগুলো ভাঙতে। পদ্মার পাড়ের হাটের স্থান চিহ্নিত করা হচ্ছে। আশা করি শীঘ্রই বন্ধ হবে ইলিশের হাট।

জানতে চাইলে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে জানান, পদ্মায় উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য অফিস, নৌপুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে। জেলে আটকসহ বিপুল পরিমাণ কারেন্টজাল জব্দ হচ্ছে প্রতিদিন। এরপরও এক শ্রেণির অসাধু জেলেরা নদীর পাড়ে মাছ বিক্রির হাট বসিয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। খুব শীঘ্রই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।