ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মোবাইলে ভিডিও দেখিয়ে অজ্ঞান করে অটোরিকশা ছিনতাই!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২৪
মোবাইলে ভিডিও দেখিয়ে অজ্ঞান করে অটোরিকশা ছিনতাই! অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া সানোয়ার হোসেন

ফরিদপুর: সংসারের অভাব দূর করতে প্রায় ৭ মাস আগে একটি ব্যাংক থেকে কিস্তির মাধ্যমে এক লাখ টাকা তোলেন সানোয়ার হোসেন (৩৪)। সেই টাকা দিয়ে কিছুদিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশা কিনে শুরু করেন জীবিকা নির্বাহ।

কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে খুইয়েছেন জীবিকা নির্বাহের যানটি।  

ওই চক্রের ফাঁদে পড়ে নিখোঁজও ছিলেন এই যুবক। ভাগ্যক্রমে প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর কোনোভাবে ফিরে এসেছেন পরিবারের কাছে।

সানোয়ার হোসেন ফরিদপুর শহরের পূর্বখাবাসপুর এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে। স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন শহরতলীর বিলমামুদপুর এলাকায়। গত রোববার দুপুর ২টার দিকে নিজের অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। এরপরই নিখোঁজ হন। এর মধ্যে স্বজনরা হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকেন, কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেন।

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে ফরিদপুর শহরতলীর ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটিতে স্বজনদের আনাগোনা। সানোয়ার নিখোঁজ ও ফিরে আসার খবরে দেখতে আসছেন অনেকে। কিন্তু এখনও পুরোপুরি জ্ঞান ফিরেনি তার।  

ওই যুবকের মা শাহেদা বেগম বলেন, ‘আমাগো অভাবের সংসার। দিনমজুরের কাজ করে আগে যে টাকা আয় হতো তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্ট হতো। তাই গত এপ্রিল মাসে এক লাখ টাকা কিস্তি তুলে এই গাড়িটি কিনে। প্রতি সপ্তাহে ২৬শ টাকা কিস্তি দেওয়া লাগে, এখনও তা শোধ হয়নি।  

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সানোয়ার হোসেন বলেন, ডায়াবেটিস হাসপাতালের পাশ থেকে আমার গাড়িটি রিজার্ভ ভাড়া করে সদরপুরের কৃষ্ণপুরের ভেতরে নামিয়ে দিতে বলে। তারা ডাক্তার দেখাতে এসেছে বলে জানায়। পরে দুইজন বোরকা পরা নারী ও তিনজন পুরুষ গাড়িতে ওঠে। আমার পাশে একজন ছেলে বসে। যাওয়ার সময় আশপাশের ভিডিও করে তারা একপর্যায়ে কৃষ্ণপুর বাজারের ব্রিজ পার হলে ওই ভিডিও আমাকে দেখতে বলে, কেমন হয়েছে জানতে চায়। আমি তখন দেখতে চাইনি। এভাবে ফাঁকা রাস্তায় নিয়ে জোর করেই আমার মুখের কিনারে এনে ভিডিও দেখায়। এরপরই আমার মাথা ঘুরাতে থাকে। তখন বিষয়টি বুঝতে পেরে একজনকে লাথি দিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম এবং ধস্তাধস্তিও হয়। এরপর আর কিছু মনে নেই।

ওই যুবক আরও বলেন, এরপর আমি রাস্তায় পড়েছিলাম। রাতে স্থানীয় একজন তার বাড়িতে নিয়ে যায়। পরেরদিন একটু সুস্থ হলে দেখি আমি ওই বাড়িতে এবং দেখি আমার গাড়ি, কাছে থাকা তিন হাজার টাকা ও মোবাইল কিছুই নেই। তখন ওই বাড়ির লোকজনকে আমি সব খুলে বলি। এরপর আমাকে কিছু ভাড়ার টাকা দিলে বাড়িতে ফিরে আসি।

এ সময় তিনি কেঁদে কেঁদে আকুতি করে বলেন, আমার গাড়িটি যেন প্রশাসন উদ্ধার করে এনে দেয়। নইলে কিস্তির টাকা আর সংসার চালাবো কীভাবে!

এ বিষয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তফিউজ্জামান বলেন, জিডি হওয়ার পর শুনেছি ওই যুবক ফিরে এসেছে। এখন পুরোপুরি সুস্থ হলে তার সঙ্গে কথা বলে তদন্তে নামা হবে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। আমরা চেষ্টা করবো তার গাড়িটি উদ্ধার করতে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।