ঢাকা, বুধবার, ১১ চৈত্র ১৪৩১, ২৬ মার্চ ২০২৫, ২৫ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

উত্তরের ঈদযাত্রা হবে স্বস্তিদায়ক

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৫
উত্তরের ঈদযাত্রা হবে স্বস্তিদায়ক সিরাজগঞ্জ হাইওয়ে

সিরাজগঞ্জ: প্রায় দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে উত্তরের ঈদযাত্রায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে যমুনা সেতু পশ্চিম সংযোগ সড়কসহ সিরাজগঞ্জের চারটি মহাসড়ক। কারণ যমুনা সেতুকে কেন্দ্র করে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ২২টি জেলার যানবাহন এসব রুটেই চলাচল করে।

অতিরিক্ত গাড়ির চাপ, মহাসড়ক নির্মাণকাজ, সরু সেতুসহ নানা কারণে এই রুটগুলোতে ঈদযাত্রায় যানজট, দুর্ঘটনা, দুর্ভোগ যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল। তবে সাসেক-২ প্রকল্পের আওতায় এলেঙ্গা-রংপুর ১৯০ কিলোমিটার চারলেন মহাসড়কের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকায় দুর্ভোগের আশঙ্কা অনেকটাই কমেছে। দু-একটি স্থানে নির্মাণকাজ চলমান থাকায় একটি লেনে যান চলাচল করবে। এতে ওইসব স্থানে যানজটের শঙ্কাও করছেন পরিবহন চালকরা। এছাড়া উত্তরের ঈদযাত্রায় ডাকাতি-ছিনতাইয়েরও আশঙ্কাও করেন যাত্রীরা।  

তবে এসব আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে এবারের উত্তরের ঈদযাত্রা আগেরবারের চেয়ে অনেকটা স্বস্তিদায়ক হবে বলে আশ্বস্ত করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।  

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ২২টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলের মানুষের সড়ক যোগাযোগের অন্যতম রুট হয় সিরাজগঞ্জের ১০৪ কিলোমিটার মহাসড়কগুলো। এর মধ্যে ৫৫ কিলোমিটার ন্যাশনাল হাইওয়ে। প্রতি বছরই এসব রুটে গাড়ির পরিমাণ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে যানজট, দুর্ঘটনা আর দুর্ভোগের রুটে পরিচিত হয়।  

সোমবার (২৪ মার্চ) যমুনা সেতু পশ্চিম মহাসড়কের কড্ডার মোড়, ঝাঐল ওভার ব্রিজ, নলকা, পাঁচলিয়া ও হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় পরিবহণ চালক ও যাত্রীদের সঙ্গে।  

রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী রাজকীয় পরিবহনের চালক জসিম উদ্দিন, বগুড়া থেকে আসা কথা পরিবহনের চালক আব্দুল গফুর, আরপি পরিহবনের হেলপার সোহেলসহ পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলেন, আগের বছরগুলোর তুলনায় এ বছর মহাসড়ক অনেক সুন্দর হয়েছে। আশা করছি এবার যানজট হবে না। তবে মহাসড়কের বেশ কিছু পয়েন্টে ডাকাত আতঙ্কের কথা বলেন তারা। তারা বলেন, গাড়িতে ঢিল ছুঁড়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতি হচ্ছে। এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে অনেকেই।  

মহাসড়ক দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন যাত্রীরাও। সুমাইয়া নামে এক গার্মেন্টসকর্মী বলেন, আগে ঈদের মৌসুমে ঢাকা থেকে আসতে আড়াই ঘণ্টার পথ ১০ ঘণ্টা লাগতো। আশা করি এবার হবে না। হাবিব, মোর্শেদ, আহসানসহ অনেক যাত্রী বলেন, সিরাজগঞ্জের সব রাস্তাই এক সময় দুর্ভোগের ছিল। এখন রাস্তা দেখে যেটা মনে হচ্ছে আর যানজট হবে না। তারা বলেন, আশা করি এবারের ঈদযাত্রা অনেক স্বস্তিদায়ক হবে।  

জানা যায়, যমুনা সেতু চালু হওয়ার পর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ২২টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলের মানুষের সড়ক যোগাযোগের অন্যতম রুট হয় সিরাজগঞ্জের মহাসড়কগুলো। প্রতি বছরই এ রুটে গাড়ির পরিমাণ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে যানজট, দুর্ঘটনা আর দুর্ভোগের রুটে পরিচিত হয় সিরাজগঞ্জের সড়কগুলো। বিশেষ করে ঈদযাত্রা মানেই উত্তরাঞ্চলবাসীর গলার কাঁটা হিসেবে খ্যাত হয়ে এ জেলার ১০৪ কিলোমিটার মহাসড়ক। গত দেড় যুগ ধরে ঈদযাত্রায় ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়েছে মানুষ।

সাসেক-২ প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী মীর আখতার হোসেন লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. এখলাস উদ্দিন বলেন, যমুনা ব্রিজের পশ্চিম থেকে হাটিকুমরুল পর্যন্ত ১৫টি কালভার্ড ৭টি ব্রিজ, ৪টি আন্ডারপাস ও দুটি ফ্লাইওভার রয়েছে। ইতোমধ্যে ৬টি ব্রিজে গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। দুটি ফ্লাইওভারের মধ্যে একটি ফ্লাইওভারের কাজ চলমান রয়েছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ঝাঐল ওভারব্রিজের ঢাকা থেকে বগুড়া অংশ চালু করে দিয়েছি। একটি ফ্লাইওভারের কাজ চলমান রয়েছে। নির্মাণাধীন ইকোনমিক জোন ফ্লাইওভারের দুইপাশে দুই লেন করে চালু করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে যমুনা সেতু পশ্চিমপ্রান্ত থেকে হাটিকুমরুল অংশে কোনোপ্রকার ট্রাফিক জ্যাম ছাড়াই নির্বিঘ্নে মানুষ চলাচল করতে পারবে।  

স্বস্তির কথা জানিয়ে হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুর রউফ বলেন, যাত্রীরা যাতে প্রিয়জনের সঙ্গে সুন্দরভাবে ঈদ উদযাপন করতে যেতে পারে সেই লক্ষ্যে ব্যাপক নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। যে সব এলাকা দুর্ঘটনাপ্রবণ ও যানজটপ্রবণ সে এলাকাগুলো চিহ্নিত করেছি। এসব এলাকায় আমাদের বাড়তি নজরদারি থাকবে। মোবাইল টিম থাকবে পিকেট ডিউটি থাকবে। আমরা আশা করছি গতবারের চেয়ে এবার স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা যাত্রীদের দিতে পারবো।  

সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, আপনারা জানেন সিরাজগঞ্জকে উত্তরবঙ্গের গেটওয়ে বলা হয়। আমাদের ৫৫ কিলোমিটার ন্যাশনাল হাইওয়ে রয়েছে। গতবারের চেয়ে হাইওয়ের পরিস্থিতি এবার অনেক ভালো। ঝাঐল ওভারব্রিজের একটি লেন খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে হাটিকুমরুল পর্যন্ত আর কোনো সমস্যা নেই। তবে হাটিকুমরুল-বগুড়া মহাসড়কের চান্দাইকোনা বাজারের আগে একটি সিঙ্গেল লেন আছে। সেখানে কিছু সময়ের জন্য একটু প্রবলেম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর বাইরে আর কোথাও সমস্যা হবে না। ২৬ মার্চ থেকে ৫ শতাধিক পুলিশ মহাসড়কে চক্রাকারে দায়িত্ব পালন করবে।  

ডাকাতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাইওয়েতে যারা ডাকাতির সঙ্গে জড়িত, তাদের অনেককেই গ্রেপ্তার করেছি। ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ব্ল্যাক স্পটগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।  

হাইওয়েতে কোনো ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটবে না বলে নিশ্চিত করেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮২০ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।