ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩২, ০৬ মে ২০২৫, ০৮ জিলকদ ১৪৪৬

জাতীয়

মধুপুর শালবনে ইউক্যালিপটাস বাদ দিয়ে লাগানো হবে শালগাছ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:২৮, মে ৫, ২০২৫
মধুপুর শালবনে ইউক্যালিপটাস বাদ দিয়ে লাগানো হবে শালগাছ অধিবেশনে বক্তব্য রাখছেন বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ছবি: জি এম মজিবুর

ঢাকা: মধুপুর শালবনের ১৫০ একর জমিতে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস গাছ বাদ দিয়ে শালগাছ লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

সোমবার (৫ মে) দৈনিক পত্রিকা বণিক বার্তা আয়োজিত রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে ‘কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা ও প্রাণ-প্রকৃতি সম্মেলন-২০২৫’ এর দ্বিতীয় অধিবেশনে এসব কথা বলেন তিনি।

উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যেই কৃষি জমি সুরক্ষা আইন পাস করতে পারব। সেখানে কৃষকের সুরক্ষার কথা থাকবে। কৃষি ও কৃষকের সুরক্ষার বিষয়ে বিভিন্ন সময় অনেক আলাপ-আলোচনা করা হলেও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে অন্তর্বর্তী সরকার আগামী দুই মাসের মধ্যেই কৃষি সুরক্ষা আইন পাস করতে পারবো।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রের প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে পরিবেশ, জনগণ ও কৃষির নিরাপত্তা দেওয়া। আবার উন্নয়ন করতে গেলে পরিবেশের ক্ষতি হয়। আমাদের এসব যদি কিন্তু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এটা শুধু রাষ্ট্রের দায় নয়, ব্যক্তি খাতেও এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের টেবিলে কেবল অনেক পরিমাণে খাদ্য পৌঁছালেই হবে না, সেটার মান নিয়েও ভাবতে হবে। ঢাকা শহরের মানুষকে পানি খাওয়ার জন্য মেঘনা নদীতে যেতে হচ্ছে। ওখানে আবার বালু ও সিমেন্ট কারখানা থাকায় আলাদা করে টাস্কফোর্স করতে হচ্ছে। আমাদের এসব বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, এক ফসলি জমি নিয়ে অনেক কথা হয়। বাস্তবে এক ফসলি জমি খুবই কম। বেশির ভাগ জমি ২-৩ ফসলি। আধুনিক কৃষির নামে অনেক কিছু এ দেশে নিয়ে আসা হচ্ছে, যা অন্যান্য দেশে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কৃষি জমি কিংবা কৃষকের স্বার্থকে বাদ দিয়ে কৃষির কথা বলা যাবে না। আরও বেশি উৎপাদন ও মুনাফার লোভে অপরীক্ষিত কিছু যেন আমরা ব্যবহার না করি।

দ্বিতীয় অধিবেশনে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, আট হাজার বছর আগে থেকে কৃষির কাজ শুরু হলেও কৃষির উন্নয়ন বেশি দিন আগে শুরু হয়নি। মানুষ বেড়েছে, মানুষের প্রয়োজনে কৃষি জমি বাড়িয়ে বাড়তি মানুষের চাহিদা পূরণ করা হয়েছে। এখন জমি বাড়ানোর সুযোগ নেই, একই জমিতে বেশি ফসল ফলিয়ে বাড়তি মানুষের চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
 
তিনি বলেন, ১৯৬০ সালের আগে ফসল উৎপাদনে বড় ধরনের উন্নয়ন হয়নি। কিন্তু ১৯৭০ দশকে কৃষিতে বড় ধরনের উন্নয়ন হয়, বাড়ে উৎপাদন।

তিনি আরও বলেন, এনার্জির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সারের দাম বেড়ে যায়। আমাদের সরকার ভর্তুকি দিয়ে সারের দাম কমিয়ে নাগালের মধ্যে রাখা হয়েছে। তারপরও সারের বাড়তি দামে প্রভাব পড়বে।

আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, কারো দোষ দিয়ে উন্নতি হয় না। দোষ দিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি করা হয়। দাম কমলে কৃষককে দোষ দেওয়া হয়, বাড়লে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের দোষ দেওয়া হয়।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) অধ্যাপক ড. আব্দুর রব মিয়া বলেন, গ্রামের কৃষকদের সন্তানরা এখন আর কৃষি কাজ করতে চাইছে না। তারা শহরে চলে আসছে। ফলে কৃষিতে পেশাজীবীর সংখ্যা কমে যাবে।

তিনি বলেন, এখন মুনাফা ভিত্তিক ব্যবসা বাড়ছে, এতে তাদের লাভও হচ্ছে। এ ধারা কৃষি ফার্ম ভিত্তিক ব্যবসার দিকে চলে যাবে। এ জন্য যন্ত্রায়ন করতে হবে, বেশি জমিতে অল্প মানুষে চাষ করতে হবে, যাতে বেশি মুনাফা করতে পারে। কৃষকরা ফসল উৎপাদন করে দাম পায় না। কৃষকরা যে ফসল বিক্রি করেন, ভোক্তা পর্যায়ে তা তিনগুণ দামে বিক্রি হয়। ধান কিনতে হবে কৃষকের কাছে থেকে। যাতে কৃষক বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন।

ইস্ট-কোস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী বলেন, ব্যাংকগুলো যে কৃষি ঋণ বিতরণ করে এ ঋণের সুদ হার বেশি। এ বিতরণ ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ জোরদার করা দরকার, সুদ হার কমাতে হবে। যে সব ব্যাংক কৃষি ঋণ বিতরণ করছে না সেগুলোকে বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে।

দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় অধিবেশনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন।

জেডএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।