ঢাকা: স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে কলঙ্কিত করতে যারা হামলা চালিয়েছে তাদের নামে মামলা হয়েছে, আর যারা নির্দেশদাতা তদন্তে তাদের নামও বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
বুধবার (৩১ মার্চ) সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) আহত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন আইজিপি।
তিনি বলেন, এসব হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় হেফাজতে ইসলামের নেতাদের নাম দেওয়া হয়নি, বিষয়টি এমন নয়, যারা হামলা করেছে তাদের নামে মামলা হয়েছে, যারা নির্দেশদাতা তাদের নামও তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
‘বিতর্ক এড়াতে হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। কারণ তারা অনস্পটে ছিল না। তবে তদন্তে সম্পৃক্তা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হামলার নির্দেশদাতা যারাই হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা তো কোনো নির্দেশদাতাকে বাদ দিচ্ছি না।
হেফাজতের তাণ্ডবের বিরুদ্ধে সারাদেশে এখন পর্যন্ত কতগুলো মামলা হয়েছে? এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, এই মুহূর্তে সুনির্দিষ্ট করে মামলার সংখ্যা বলা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ দেশের বিভিন্ন জেলায়, বিভিন্ন জায়গা থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর সংখ্যাটা আমরা কাল-পরশু জানাতে পারবো।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা সারাদেশে তাণ্ডব চালায় উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, প্রথমে বায়তুল মোকাররম মসজিদে এবং পরে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে তাণ্ডব চালায়। এতে মাদ্রাসার কোমলমতি ছাত্রদের ব্যবহার করা হয়েছে। ওইদিন হাজার হাজার মাদ্রাসা ছাত্র হাটহাজারী থানায় আক্রমণ চালায়। সেখানে থাকা ডাকবাংলো, ভূমি অফিস আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় তারা।
আইজিপি বলেন, সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, ভূমি অফিসের সমস্ত কাগজপত্র (ল্যান্ড রেকর্ড) একত্রে করে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনা সেখানেই শেষ। কিন্তু ল্যান্ড রেকর্ড জ্বালিয়ে দেওয়ার কারণে ওই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ এখন বছরের পর বছর কষ্ট পাবেন।
বাংলাদেশে ভূমি বিরোধ একটি বিরাট সমস্যা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ভূমি (ল্যান্ড পলিটিক্যাল) নিয়ে বাংলাদেশে অনেক ক্রাইম হয়।
হেফাজতের কোমলমতি মাদ্রাসা ছাত্র এবং শিক্ষকরা হাটহাজারীর হাজার হাজার মানুষ ও গ্রামবাসীদের কেন এই শাস্তিতে ফেললো, সেটা আমরা জানা নেই।
গ্রামবাসীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এ বিষয়টি একটু চিন্তা করে দেখবেন, যারা তাদের সাহায্য সহযোগিতা করেন, তাদের দান-সহযোগিতা, জাকাত-ফেতরা দেন, মাদ্রাসার উন্নয়নের জন্য কাজ করেন, পরকালে পূর্ণ হবে এই ভেবে তাদের (হেফাজতে ইসলামকে) সাহায্য সহযোগিতা করেন আর তারাই হাজার হাজার গ্রামবাসীর শাস্তির ব্যবস্থা করেছে।
তিনি বলেন, হামলায় হাটহাজারী ডাকবাংলাতে থাকা পুলিশের একজন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি), পুলিশের একজন দাযিত্বরত কনস্টেবলকে বেধড়ক মারধর ও কিডন্যাপ করে নিয়ে যায় হেফাজত কর্মীরা।
এ ঘটনায় গুরুতর আহত শিক্ষানবিশ এএসপি ও ও এসআইকে প্রথমে চট্টগ্রামের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। এসপি ফারাবী বর্তমানে চট্টগ্রামের সিএমএইচ হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন। এদিকে এসআইর অবস্থা অবনতি হলে আমরা তাকে ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতলে নিয়ে আসি। পরদিনও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধ্বংসাত্মক তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। প্রেসক্লাব ও সাংবাদিকরা তাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি। প্রেসক্লাব তাদের কী সমস্যা করেছে সেটা আমার জানা নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ফাঁড়ির ইন্সপেক্টর নুর আলমকেও বেধড়ক পিটিয়েছে। তাকেও অ্যাম্বুলেন্স ও হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
আইজিপি বলেন, সিএমএইচ হাসপাতালে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন গুরুতর আহত তিন পুলিশ সদস্যের মধ্যে এসআই মেহেদীর অবস্থা এখনও শঙ্কামুক্ত নয়। দেশবাসীর কাছে তাদের জন্য দোয়া চাই।
‘নারায়ণগঞ্জে হামলার ঘটনায় মুসলমান কিনা, তা যাচাই করতে কলেমা পাঠ করানো হয়েছে। যা আমাদের ’৭১ সালের কথা মনে করিয়ে দেয়, যা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী করতো, এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী? আইজিপি বলেন, আমরা যদি একটু ফিরে তাকাই, তবে তাদের কানেকশনটি (সংযোগ) কোথায়? তা আমরা সবাই জানি। নতুন প্রজন্মও তা জানে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২১
এসজেএ/এএ