ঢাকা: সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে স্বাস্থ্যবিধি যেন ‘কাজীর গরু’। কেতাবে আছে গোয়ালে নেই! টার্মিনাল এলাকায় বারবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হলেও সেদিকে নজর নেই যাত্রীদের।
শুক্রবার (২ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এ দৃশ্য দেখা যায়।
বেলা ১১টায় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছিল ইমাম হাসান-৭ লঞ্চটি। সেখানে প্রবেশমুখেই যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপছিলেন মো. তারেক।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমরা প্রবেশমুখেই যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপছি। একই সঙ্গে যাত্রীদের হাতে স্যাভলন মিশ্রিত পানি দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে আমরা লঞ্চে বর্ধিত ভাড়া নিচ্ছি। একই সঙ্গে ডেকে অর্ধেক যাত্রীও নিচ্ছি। যাত্রীদের মাস্ক ছাড়া লঞ্চে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
মো. তারেকের কথা শুনে লঞ্চের ডেকে প্রবেশ করলেই দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। অনেক যাত্রীর মুখেই নেই মাস্ক। পাশাপাশি আসনেও যাত্রী বসে আছেন, সে দৃশ্যও নজরে আসে।
ইমাম হাসান-৭ লঞ্চের নিচতলার ডেকে মাস্ক ছাড়া বসেছিলেন মোজাফফর মিয়া। মাস্ক না পরার কারণ ব্যাখা করে তিনি বলেন, ভাই রে, বাইরে প্রচণ্ড গরম। এর মধ্যেই মাস্ক পরা ছিলাম। ভেতরে যেহেতু আগের চেয়ে লোক কম সেজন্য মাস্ক খুলে বসেছি।
মাস্ক না পরার কারণ ব্যাখা করতে গিয়ে মোজাফফর মিয়ার চেয়েও ‘খোঁড়া’ যুক্তি ছিল ওবায়দুর রহমানের কাছে। তিনি বলেন, ভাই সবকিছু খোলা রেখে বাস-লঞ্চে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে কি করোনা ঠেকানো যায়?
এই কারণেই কী আপনি মাস্ক পরেননি- জানতে চাইলে ক্ষিপ্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার মাস্ক পরলে গরম লাগে। এইডা আপনি কি বুঝবেন?
মাস্কবিহীন মানুষের থেকে নজর ডেকের দিকে নিলে দেখা যায়, পাশাপাশি আসনে বসে আছেন অনেকেই।
পাশাপাশি বসেছিলেন শিহাব ও রবিউল। শিহাবের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা দুই বন্ধু। আমাদের করোনার কোনো উপসর্গ নেই। আমরা আলাদা বসবো কেন?
আরেক যাত্রী আকলিমার অভিযোগ, অপরিচিত এক নারী তার পাশে বসেছিলেন। তিনি বলেন, আমি দ্বিগুণের বেশি ভাড়া দিছি। পাশে আরেক যাত্রী কেন বসবে? আমি প্রতিবাদ করায় অন্য যাত্রী উঠে গেছেন। কিন্তু তিনি আবার অন্য আরেক যাত্রীর পাশে বসেছেন।
যাত্রীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে লঞ্চটির সুপারভাইজর মো. স্বপন বলেন, আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করছি। সরকারি নির্দেশনা মেনেই টিকিট বিক্রি করেছি। কোনো যাত্রী যদি পাশাপাশি বসেন আমরা প্রয়োজনে উঠিয়ে দেবো।
ডেকের বাইরেও স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে ছিল শিথিলতা। লঞ্চটির রেলিং ধরে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে গল্প করতে দেখা গেছে অনেককেই।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর দীনেশ কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, আসলে বৃহস্পতিবার থেকে নতুন নির্দেশনা এসেছে। এখনও সবাই তাতে অভ্যস্ত হতে পারেনি। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, সামনের দিনগুলোতে এসব অভিযোগ আর আসবে না।
এদিকে, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো স্বাস্থ্যবিধিই নজরে আসেনি। টার্মিনালে প্রবেশকারীরা যে যার মতো করেই সেখানে প্রবেশ করছেন।
বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) দুপুরে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী লঞ্চের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেন। তবে লঞ্চের কেবিনের জন্য এ ভাড়া প্রযোজ্য নয় বলেও জানান তিনি।
এসময় তিনি লঞ্চে স্বাস্থ্যবিধি মানা কঠিন বলে মন্তব্য করে যাত্রী সাধারণকে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বের না হওয়ার অনুরোধ জানান।
এসব বিষয়ে তদারকির বিষয়ে তিনি বলেন, বিআইডব্লিউটিএ এবং নৌ পুলিশ মনিটরিং করবে।
একই সঙ্গে মহামারির মধ্যে লঞ্চের ই-টিকেটিং চালু করতে লঞ্চ মালিকদের বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০২১
ডিএন/এএ