নীলফামারী: সারাদিন গায়ে খেটে কাজ করি সংসার চালাই। কাজ করি বলে পেটে ভাত জোটে।
তাদের মতো আরতি বালা (৪৫), সুমতি রায় (৫৬), শাপলা খাতুন (৪৬) ও জয়মনি বালাসহ (৪৯) কয়েকজন নারী নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের অচিনার ডাঙ্গা এলাকার ফসলের মাঠে কাজ করছিলেন।
তাদের অনেকের স্বামী নেই। কেউ বা অভাবের কারণে মাঠের কাজ করছেন। প্রতিদিন ক্ষেতে খামারে কাজ করে নারী শ্রমিকরা পাচ্ছেন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা করে। আর একই কাজ করে পুরুষ শ্রমিকরা পাচ্ছেন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে।
মোমেনা খাতুন বলেন, হামরাতো কাজত ফাঁকি দেই না, পুরুষের মতো কাজ করি। তাও হামার রেট কেনে কম ব্যাহে কনতো? হামরা মে দিবস টে দিবস বুঝি না ব্যাহে, কাজ করি ভাত খাই।
সৈয়দপুরের বিসিক শিল্পনগরীসহ অলিগলিতে গড়ে উঠেছে ছোট বড় অনেক শিল্প কল-কারখানা। এসব কল-কারখানায় কাজ করছেন নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোররা। বড় বড় কারখানাগুলোতে মে দিবসের ছুটি রাখা হয়।
বিসিক শিল্প নগরীতে কর্মরত নারী শ্রমিক সখিনা, নয়নতারা ও সাহের বানু বলেন, মে দিবসে আমাদের কারখানা বন্ধ থাকবে। সারাদিন আনন্দ হইহুল্লোড় করে কাটাব আমরা। তবে আমাদের কল্যাণের জন্য সরকারিভাবে যে শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র আছে, তা কাজে আসছে না। তারা আমাদের খোঁজও নেয় না। এমনকি চিকিৎসাও নাই। শহরের অলিগলিতে গড়ে ওঠা ছোট ছোট কারখানাগুলোতে মে দিবসে কাজ করে থাকেন শ্রমিকরা।
সৈয়দপুরের সবচেয়ে বড় তৈজসপত্র তৈরির কারখানা রয়্যালেক্স মেটাল ইন্ডাস্ট্রির নোয়াহ্ কোম্পানিতে কাজ করেন প্রায় ১২০০ শ্রমিক-কর্মচারী। এর মধ্যে সাড়ে ৪০০ নারী। শ্রমিকদের হাতে তৈরি হচ্ছে নান্দনিক রাইস কুকার, প্রেসার, কুকার, ননস্টিক ফ্রাইপ্যান, ব্লেন্ডার, ওভেন, ইনডাকশন ইত্যাদি।
এখানকার নারী শ্রমিকরা বলেন, সুন্দর পরিবেশে কারখানাটিতে কাজ করছি আমরা। মে দিবসের ছুটি থাকছে কারখানায়। এছাড়া বিভিন্ন দিবস ও উৎসবে বন্ধ থাকে কারখানাটি।
রয়্যালেক্স মেটাল ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাজ কুমার পোদ্দার জানান, কারখানাটি মূলত নারীবান্ধব। এখানে নারী-পুরুষের হাতের ছোঁয়ায় বিশ্বনন্দিত পণ্য তৈরি হচ্ছে। যাচ্ছে ভারত, নেপাল ও ভুটানে। মহান মে দিবসে আমার এ কারখানাটি বন্ধ থাকবে। সব সময় শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। ফলে ওরা সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করিয়েছেন। অনেকে বসতভিটাও গড়েছেন।
এসআই/জেএইচ