ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২, ০১ মে ২০২৫, ০৩ জিলকদ ১৪৪৬

সারাদেশ

‘ফ্যাসিবাদের উত্থান হলে কেউ বাঁচতে পারবেন না’, ঐক্যের ডাক রিজভীর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৫২, মে ১, ২০২৫
‘ফ্যাসিবাদের উত্থান হলে কেউ বাঁচতে পারবেন না’, ঐক্যের ডাক রিজভীর রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বৃহস্পতিবার বরিশাল নগরের সদর রোডের বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। ছবি: বাংলানিউজ

বরিশাল: ‘২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়েছি’ বলে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হুমকির কঠোর সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, শিশু, কিশোর, শ্রমিক, রিকশাওয়ালার রক্ত পান করার পরও আপনার তৃষ্ণা মেটেনি। এত হত্যা, গুম, খুনের পর আপনার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় আপনি তাদের জীবন কেড়ে নিতে চাইছেন!

এসময় দেশবাসীর প্রতি ঐক্যের ডাক দিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, কোনোভাবে যদি ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটে তাহলে কেউ কিন্তু বাঁচতে পারবেন না।

বৃহস্পতিবার (১ মে) বরিশাল নগরের সদর রোডের বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিজভী এ কথা বলেন। মহানগর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক ফয়েজ আহমেদ খানের সভাপতিত্বে এতে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।

রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা কোথায় পালিয়ে আছে? পার্শ্ববর্তী দেশে। কিন্তু কোথায় আছে? সেকথা ওখানকার প্রধানমন্ত্রীও বলেন না, আর কেউও বলে না। ওনার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, যে ঘটনায় উনি বলেছেন ২২৭টি হত্যা নিশ্চিত হলো (আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, তাই ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি)। অডিও ভাইরাল হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা এর ফ্যাক্ট চেকিং করেছে, ফরেনসিক করে দেখেছে এটা সত্য এবং শেখ হাসিনার বক্তব্য।

‘যিনি কদিন আগে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তিনি কীভাবে বলতে পারেন, যারা তার নামে মামলা দিয়েছে সেই ২২৭ জনের হত্যা নিশ্চিত হলো। অর্থাৎ তিনি হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। এত শিশু, কিশোর, শ্রমিক, রিকশাওয়ালার রক্ত পান করার পরও আপনার তৃষ্ণা মেটেনি। এত হত্যা, গুম, খুনের পরে আপনার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় আপনি তাদের জীবন কেড়ে নিতে চাইছেন। ’

রিজভী দেশবাসীকে সাবধান করে বলেন, ‘কোনোভাবে যদি ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটে তাহলে কেউ কিন্তু বাঁচতে পারবেন না। সুতরাং ঐক্যের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। একত্রে কাজ করতে হবে। ’

এসময় তিনি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি মানবতার করিডোর দিতে চান মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে, যেখানে দুর্ভিক্ষ হচ্ছে। আপনি জনগণের কী আকাঙ্ক্ষা সেটি শুনবেন না। আপনি রাজনৈতিক দল যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে, যাদের ছেলেরা জীবন দিয়েছে, যাদের ছেলেরা অদৃশ্য হয়ে গেছে, খুনের শিকার হয়েছে, সেসমস্ত রাজনৈতিক দলের কথা আপনি শুনবেন না? আপনি এককভাবে আপনার কয়েকজন অ্যাডভাইজার নিয়ে মানবতার করিডোর করবেন? সেখানে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বাংলাদেশের নিরাপত্তা কোন জায়গায় যাবে সেটি জনগণের কাছে পরিষ্কার না করে আপনি করিডোর দিতে চাচ্ছেন। আপনি নির্বাচিত নন, কিন্তু আপনি তো জনগণের ও রাজনৈতিক দলের সমর্থিত সরকার। এজন্য আপনাকে জনগণের সেন্টিমেন্ট অনুযায়ী কাজ করতে হবে। যেখানে দেশ ও দেশের মানুষ বিপন্ন হতে পারে সেই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দুঃখজনক।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিন, একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন কবে করা যায় তার তারিখ সুনির্দিষ্ট করে বলুন।

শেখ হাসিনার আমলে শ্রমিকরা সমাবেশ করার অধিকার পায়নি
শ্রমিকদের বঞ্চনার কথা তুলে ধরে রুহুল কবীর রিজভী বলেন, আমাদের দেশে ১২ কোটি ভোটার, তার মধ্যে শ্রমিক হচ্ছেন ৭ কোটি ৩৫ লাখ। যারা ভোট দিয়ে আমাদের সরকার নির্বাচিত করেন, যারা ভোট দিয়ে সরকার গঠন করেন তারা বঞ্চিত, তারা নির্যাতিত, তারা অসহায়। কথায় কথায় তাদের ছাঁটাই হয়, তাদের আয় দিন দিন কমে যাচ্ছে, তাদের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে না। বিগত ১৫-১৬ বছর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে শ্রমিকরা তাদের সমাবেশ করার, সংগঠিত হওয়ার অধিকার পাননি। তাদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেয়নি শেখ হাসিনা। অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল ২০২৩-একটি আইন করে শ্রমিকদের দাবি দাওয়ার অধিকার শেখ হাসিনা বন্ধ করে দিয়েছে। যতটুকু আইন করা হয়েছিল, সেটি করা হয়েছিল মালিকের স্বার্থে, শ্রমিকদের স্বার্থে নয়। তাই আজ জুটমিল, চিনিকল, গার্মেন্টস্ শিল্পসহ প্রতিটি জায়গায় শ্রমিকরা জীবন দিচ্ছেন। শেখ হাসিনার আমলে বিনা চিকিৎসায় হাসপাতালের বারান্দায় শ্রমিক নেতাদের জীবন দিতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পোশাক শিল্পে ন্যূনতম মজুরির জন্য আন্দোলনে শেখ হাসিনার পেটোয়া বাহিনী, শেখ হাসিনার র‌্যাব, শেখ হাসিনার পুলিশ গুলি চালিয়েছে। তারা গুলি চালিয়ে নারী শ্রমিক আঞ্জুমান আরা খাতুনকে হত্যা করেছে। শ্রমিক জালাল উদ্দিনকে হত্যা করলো, শ্রমিক রাসেলকে হত্যা করলো। শেখ হাসিনার গুলিতে শুধু ছাত্র নয়, শুধু জনতা নয়, শ্রমিকদেরও রক্ত গেছে। সেই রক্তে রচিত হয়েছে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের সেই মহাবিপ্লব। যে আন্দোলনের ১ শতের ওপর শ্রমিক শহীদ হয়েছেন। শ্রমিকরা ১৮৮৬ সালে আমেরিকায় শুধু জীবন দেয়নি, আজও জীবন দিচ্ছে, আজও মারা যাচ্ছে, আজও রক্ত ঝরাচ্ছে। কিন্তু আমরা তাদের কেউ মূল্যায়ন করি না। আমরা তাদের কেউ খবর রাখি না। দেশে ক্রান্তিকাল এখনো শেষ হয়নি, আজও শ্রমিকদের আয় দিনকে দিন কমে যাচ্ছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে। হাজার হাজার শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে। আজ তাদের পরিবারে কোন খাবার নেই, তাদের সন্তানেরা বই খাতা কিনতে না পেরে স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। কে দেখবে এদের? কে দেখবে এদের পরিবারকে? এমনকি বিগত সরকারের শ্রমিকবিরোধী নীতির কারণে আউটসোর্সিংয়ের নামে স্থায়ী শ্রমিকরাও কর্মসূচিতে পড়ছে।  

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে সিন্ডিকেট ছিল, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে হলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অনেক টাকা গুনতে হতো। এরমধ্যে ছিল মাসুদউদ্দিন চৌধুরী, তৎকালীন অর্থমন্ত্রী লোটাস কামাল (আ হ ম মুস্তফা কামাল)-সহ আরও অনেক লোক। এই সিন্ডিকেটের কারণে শ্রমিকদের কষ্ট হতো। শ্রমিকরা ঘর-জমি বিক্রি করে ওই সিন্ডিকেটকে টাকা দিয়ে মালয়েশিয়ায় গিয়েও চাকুরি পেত না। আজ তো সিন্ডিকেট থাকার কথা নয়, আজ কেন শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করবে! কেন আজ তারা অর্ধাহারে-অনাহারে জীবন কাটাবে? আজ তো ফ্যাসিবাদ নেই, আজ তো সেই জুলুম নেই, তাহলে কেন আজ শ্রমিক ছাঁটাই হবে?

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার দোসরদের পাপের বিচার হোক কিন্তু তাদের মিল, কলকারখানা বন্ধ না করে প্রশাসক নিয়োগ করে সেগুলো সচল রাখুন। কোনো শ্রমিকের চাকরি যেন না যায়, কোনো শ্রমিক যেন তার কর্মসংস্থান না হারান সেদিকে খেয়াল রাখুন।  

ড. ইউনূসের সরকারকে ৫ আগস্টের আন্দোলনের ফসল উল্লেখ করে রিজভী বলেন, তাকে তো জনগণ যেখানে ভালো থাকবে, জনগণ যেভাবে চাল, ডাল, তেল কিনতে পারবে, জনগণ যেভাবে পেঁয়াজ, কাচা মরিচ, চিনি, লবণ কিনতে পারবে সেই ধরনের পরিস্থিতি-পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কিন্তু যদি ড. ইউনূসের সরকার শুধু ছাঁটাই করেন, বেকারত্ব বৃদ্ধি করেন, কর্মসংস্থান শূন্য করেন তাহলে তো জনগণের আস্থা থাকবে না এই সরকারের প্রতি। আপনাকে জনগণের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।  
 
সমাবেশ শেষে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এর আগে জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন স্থান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল এসে সমাবেশে যোগ দেয়।

এমএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।