জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, এশিয়াভিত্তিক সাইবার ক্রাইম চক্রগুলো বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। এশিয়ার এই চক্রগুলো পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রায় ৩৭ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করেছে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের এই সতর্কতা জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক কার্যালয় (ইউএনওডিসি) জানিয়েছে, চীনা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই চক্রগুলো বিভিন্ন সাইবার অপরাধের সঙ্গে জড়িত। প্রতি বছর ভুয়া বিনিয়োগ, ক্রিপ্টোকারেন্সি, প্রেমের ফাঁদসহ নানা প্রতারণার মাধ্যমে তারা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে। চক্রগুলো এভাবেই সারা বিশ্বে সাইবার অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
জানা গেছে, চক্রগুলো মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকা এবং কম্বোডিয়া ও লাওসের তথাকথিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বসে কাজ চালায়। আফ্রিকার কয়েকটি দেশ যেমন, জাম্বিয়া, অ্যাঙ্গোলা ও নামিবিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ যেমন, ফিজি ও ভানুয়াতুতে তাদের ঘাঁটি রয়েছে। এরা বিদেশি বিনিয়োগকে আকর্ষণ, অর্থ পাচার, মাদক চোরাচালানসহ মানব পাচারের মতো অপরাধে জড়িত।
প্রতিবেদনটি সতর্ক করে বলেছে, অপরাধচক্রগুলোর নেটওয়ার্ক দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত।
ইউএনওডিসি-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত আঞ্চলিক প্রতিনিধি বেনেডিক্ট হফম্যান বলেছেন, আমরা পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংগঠিত অপরাধ চক্রগুলোর বৈশ্বিক বিস্তার লক্ষ্য করছি।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের জুন মাসে লিবিয়া অবৈধ ক্রিপ্টো মাইনিং কার্যক্রমে অভিযান চালিয়ে ৫০ জন চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করে। এছাড়াও, সম্প্রতি মিয়ানমারে চীনের সহায়তায় পরিচালিত অভিযানে পাচার হওয়া প্রায় ৭ হাজার শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়েছে।
হফম্যান বলেন, এটি ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। কর্তৃপক্ষ কোনো এলাকায় অভিযান চালালেও এর শিকড় পুরোপুরি নির্মূল করা যায় না বরং অপরাধীরা জায়গা বদল করে।
জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর পদক্ষেপ সাময়িকভাবে এই কার্যক্রমে বাধা দিলেও, অপরাধীরা আবারও সংগঠিত হয়ে তাদের কাজ শুরু করে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আধুনিক প্রযুক্তি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। অপরাধচক্রগুলো এখন সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড প্রক্রিয়ায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এনক্রিপ্টেড মেসেজিং, পেমেন্ট অ্যাপ এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নজর এড়িয়ে যাচ্ছে।
অপরাধ দমনে দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। অপরাধচক্রগুলোর অর্থায়ন ব্যবস্থাকে ছিন্ন করতে আরও জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২৫
এসএস/এসএএইচ