ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

গণতন্ত্রকে জবাই করা দলই নাকি সেটির চ্যাম্পিয়ন: নজরুল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০২৩
গণতন্ত্রকে জবাই করা দলই নাকি সেটির চ্যাম্পিয়ন: নজরুল

ঢাকা: গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ রাখা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, যারা গণতন্ত্রকে জবাই করে একদল করেছে, তারাই এখন নাকি গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন! দাবি করে, তারাই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় বন্ধু!

সোমবার (২ জানুয়ারি) বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

নজরুল বলেন, জনগণ কল্যাণ, সমৃদ্ধি ও শান্তির জন্য পরিবর্তন চায়। জনগণের এ আকাঙ্ক্ষা যুগে যুগে কেউ দমিয়ে রাখতে পারেনি। এই সরকারও পারবে না।

সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আজ দেশের মানুষ জেগে গেছে। আমাদের (বিএনপি) এত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে; মাত্র তিন মাসের মধ্যে আমাদের ১২-১৩ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। তারপরও আমাদের প্রত্যেকটা প্রোগ্রাম সফল হচ্ছে। প্রত্যেকটা আন্দোলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ অসংখ্য লোকের সমাবেশ হচ্ছে। সাধারণ মানুষ যুক্ত হচ্ছে আন্দোলনে। আর সাধারণ মানুষ তখনই আন্দোলনে যুক্ত হয়, যখন তারা পরিবর্তন চায়।

অতীত অস্বীকার করা যাবে না উল্লেখ করে বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, অতীত যখন ইতিহাস হয়, তখন তা পরিবর্তনযোগ্য না। কেউ কেউ তা বিকৃত করার চেষ্টা করে। কেউ তা ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তাও সম্ভব না। অনেকবার অনেক চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কেউ সফল হয়নি। সোনার মতো দামি, সোনার মতো উজ্জ্বল একটি বাংলাদেশ হবে, এটাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের ভাবনা। কিন্তু আমরা সেই দেশে দুর্ভিক্ষ দেখেছি, অনাচার, অব্যবস্থাপনা দেখেছি। শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রহীনতা দেখেছি, এক দলীয় শাসন দেখেছি। এর কোনোটিই সোনার মতো মূল্যবান না, উজ্জ্বল না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য আরও বলেন, আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের কথা শুনছি। আমরা সৃজনশীল পদ্ধতিতে আমাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছি, যাতে তারা সৃজনশীল হয় এবং আগামী দিনে একটি চমৎকার ভবিষ্যৎ গড়ায় আমাদের সাহায্য করে। কিন্তু আজ পত্রিকায় দেখি, ২০২২ সালের সৃজনশীল ইনডেক্সে ১৩৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৯তম। এই অবস্থান দিয়ে কতটা সৃজনশীল হওয়া সম্ভব হবে? আর সৃজনশীল হতে না পারলে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বো কেমন করে?

জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করার মতো পাপ আর কিছুতে নেই উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম আরও বলেন, আমরা কাকে ধোকা দিতে চাই? যে জনগণ আমাদেরকে এত বিশ্বাস করে। আমাদেরকে নেতা মেনে আমাদের জন্য জীবন দেয়, কষ্ট করে, আশায় বুক বাধে। তাদের সঙ্গে প্রতারণা করার মতো পাপ বা অপরাধ আর কিছু নেই। সংবিধানে সমাজতন্ত্রের কথা কেন লেখা হয়? আমরা সংবিধানে লিখি দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবো। রাষ্ট্রের মূলনীতি সমাজতন্ত্র। কিন্তু আমরা মুক্তবাজার অর্থনীতি চর্চা করি।

এ সময় গণতন্ত্র চর্চা করার সুযোগ রাখা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, যারা গণতন্ত্রকে জবাই করে একদল করেছে, তারাই এখন নাকি গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন। দাবি করে, তারাই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় বন্ধু। গণতন্ত্র ক্ষমতায় যাওয়ার বাহন না। গণতন্ত্রের বাহন হলো নির্বাচন। নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়। আপনি সেই নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে বলবেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করছি- এটা তো গ্রহণযোগ্য, যুক্তিসংগত হতে পারে না।

বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, জনগণ আমাদেরকে সম্মান করতে চায়, বিশ্বাস করতে চায়, আমাদের উপর নির্ভর করতে চায়। আমাদের উচিত জনগণকে সেই পরিবেশ দেওয়া। দেশটা এত বছর ধরে লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কখনও এই দেশের মানুষ নিশ্চিত হতে পারছে না, কার সেবা গ্রহণ করবে। সেজন্য আমরা বলেছি, সব মত, পথের সমন্বয়ে শান্তি ও সৌহার্দ্যের একটি সমাজ সৃষ্টি করা দরকার। প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা নয়, সৌহার্দ্যমূলক একটি সমাজ ও জাতি গড়ে তোলা দরকার।

নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, দেশের জনগণ চায় আমরা যারা রাজনীতি করি, মিলেমিশে জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করি। নিজেদের কল্যাণ না। এদেশের টাকা লুট করে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম, কানাডায় বেগম পাড়া, দুবাইয়ে থার্ড গুলশান এবং সুইস ব্যাংকে টাকা জমানোর জন্য না। এদেশের মানুষ চায়, আমরা তাদের সাথে থাকি।

জনগণ কি বোঝে, কি অনুভব করে, তাদের মনের জ্বালা বা আনন্দ কতটা এটা প্রকাশ করার সুযোগও দেশে নেই অভিযোগ করে তিনি বলেন, জনগণ তো তার আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ প্রকাশের সুযোগ একদিনই পায়। নির্বাচনের দিন। সেদিন জনগণ তার মতামত ব্যক্ত করে। কিন্তু সেদিন তাকে আপনারা ভোট কেন্দ্রে যেতে দেন না। কিংবা গিয়ে দেখে তার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে।

ক্ষমতা কি মানুষকে অন্ধ করে দেয়? বিরোধী পক্ষকে গ্রেফতার করে রাখলে আন্দোলনে জয়ী হওয়া যায় না; ক্ষমতায় যাওয়া যায় না। এটা তারা (সরকার) জানে। জানার পরও কেন একই ভুল করছে তারা?

বিএমএল’র সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম (বীর প্রতীক), জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার প্রমুখ।

সম্মেলনে বিএমএল’র কমিটিও ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০২২
এসসি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।